।। পি ছু টা ন।। গুগলে সার্চ করলে দেখা যায় বাংলা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে অন্যতম মিষ্টি ভাষা। আর সেই মিষ্টি ভাষার একটা খুব মিষ্টি শব্দ হলো "পিছুটান" যার অর্থ হলো…
শেষ পর্যন্ত Sajbir Ahmed Saikat এবং Golam Destegir ভাইয়ের অনুপ্রেরনায় আর Salman Sanjid ভাই মনোনয়ন করাতে একটা ঘটনা লিখে ফেললাম। গত ৮ বছর ধরে গরুর গ্রুপের সাথে জড়িত এবং এবারই…
আজকের লেখাটা আমি Arif Rafsan ভাইকে ডেডিকেট করছি। এটা কোনো একদিনের ছোট গল্প না। এটা অনেকটা আমার স্মৃতিচারণা, সাথে আল্লাহর কাছে একটা প্রার্থনা। ও হ্যা, এর সাথে আমার বাবার ২০১৪ সালের গরুর ছবি দিয়ে দিচ্ছি। আমি একজন এমবিভার্ট মানুষ। তবে ছোটবেলায় পিচ্চি হলেও ছিলাম বেশ চাপা ধরনের মানুষ। খুব একটা এক্সপ্রেসিভ না, কোনো আবেগ-অনুভূতিই ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারতাম না। তাই ভীতুও কেউ ভাবতো না। তবে কোরবানির ঈদের সময় বাড়িভরা মানুষের সবার একসাথে মনে পড়ে যাইতো এই পিচ্চি একটা বিরাট ভীতুর ডিম। ভীতু মানে ভয়াবহ ভীতু। তখন আমি প্রকাশ্যে ২টা জিনিসকেই মাত্র ভয় পাইতাম, আমার টিচার আর কোরবানির গরু। যদিও ছোটবেলায় খুব ভালো ছাত্র ছিলাম দেখে টিচারদের ভয় পাওয়ার ওই ব্যাপারটা আমি, আমার মা আর বাসার টিচার ছাড়া কেউ টের পান নাই কিন্তু গরুকে ভয় পাওয়ার মাত্রাটা এতো বেশী ছিল যে গুষ্টিসুদ্ধা মানুষ এই ব্যাপারে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল ছিল। আমার চেয়েও আমার ছোট কাজিন ভাই সাহস বেশী রাখতো, আমাকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করতো। লাভ হয় নাই।কিন্তু আমি গরু যেই পরিমাণ ভয় পাইতাম, আকর্ষণ বোধ করতাম তার তিন গুণ বেশী। আমাকে যারা আগে থেকে জানেন, আমার বাড়িতে বাঁধা গরু দেখেছেন তারা সবাই জানেন আমার বাড়ির সামনে একটু খোলা আর পাকা আংগিনা বা উঠানের মতো আছে। এক পাশে আছে গ্যারেজ। কোরবানির গরু আমরা এই উঠানে বেঁধে রাখি। আগে গ্যারেজেও রাখা হতো, এখন হয় না, উঠানেই সবগুলা বাঁধা থাকে। বাড়ির সবাই যার যার বারান্দায় দাড়ায়ে নিজের গরু দেখতে পান। তবে বারান্দায় দাড়ায় দেখতে হলে সবচেয়ে ভালো করে দেখা যায় দোতলার বারান্দা থেকে।আজকে স্বীকার করতে লজ্জা নেই, ছোটবেলায় আমি গরু দেখতাম ওই দোতলার বারান্দায় দাড়ায় থেকে।ভয়ের চোটে নিচে নামতে পারতাম না। সব কাজিনরা নিচে নেমে গরু দেখতো, ক্রিকেট খেলতো আর আমি বারান্দায় ঠায় দাড়ায়ে বা মেঝেতে থম মেরে বসে থেকে গরু দেখতাম। দেখতাম আর দেখতাম। দেখতেই থাকতাম, নড়তাম না। কারো সাধ্য ছিল না আমাকে নেয়ার। খাবারও ওখানে খেতাম। বারান্দার দুই পাশে আমার দুই চাচার ফ্ল্যাট। চাচীরা টেনেও তাদের ফ্ল্যাটে নিতে পারতেন না, আমি ওখানেই বসে থাকতাম। ক্লাস টু, থ্রি পর্যন্ত আমার এভাবেই কাটে। ফোর, ফাইভে উঠে সাহসের গুল্লি খেয়ে নিচে গরু বাঁধা থাকা অবস্থায় নিচে নামা, খেলাধুলা শুরু করি। এটা তখন প্রেস্টিজ ইস্যু। স্কুলে তখন একা যাওয়া-আসা করি। ক্লাস ফোর থেকে স্কুল পালাই। ইতিমধ্যে বাসা ছেড়েও পালাইসি একবার। আর গরু থাকলে নিচে নামতে পারি না, এটা কেমন কথা! তখনও কিন্তু আমার হাটে গিয়ে গরু কেনার মতো সাহস বুকে হয় নাই। হাটে যাওয়া দূরে থাক, কোরবানির সময় রাস্তায় হাটতাম না পাছে যারা গরু হাটায় নিয়ে যাচ্ছে তাদের, মানে খোলা অবস্থায় থাকা কোন গরুর মুখোমুখি পরে যাই! এর মধ্যেও হাটে গেছিলাম একবার, ক্লাস টু-থ্রি তে, বাবা চাচা কাজিনদের সাথে। কমলাপুর হাট। কাজিনরা সাহস দিয়ে নিয়ে গেছিলো। সেই সাহস যেতে যেতে পথেই শেষ, হাটের গেট পর্যন্ত গিয়ে প্রায় গগনে চাঁদ দেখে ফেললুম! কেউ আর টেনেও ভিতরে নিতে পারে না। আব্বু প্রচুর কায়দা-কসরত করলো, ধমকধামক দিল। লাভ হইলো না। শেষে আমার জায়গা হলো হাসিল ঘরের টংগে। ওইখানে বসে থেকেও ভয়ে ছিপি খুলে যায় যায় অবস্থা। ওখানে আমাকে বসায় রেখে বাকিরা গরু কিনে আনেন। আব্বু বলে দিসিলো আর কোনোদিন আমাকে হাটে নিবে না। এর থেকে বেশিদিন পরের কথা না, হয়তো ২-১বছর পর, ক্লাস ফাইভ-সিক্সে, এই প্রচন্ড ভীতু পিচ্চিরও হাটে গিয়ে আব্বুর গরু কিনতে হইসিলো। তাও গ্রামের জমজমাট ঈদের হাটে গিয়ে।ওইসময় থেকেই দিন বদলে যায়। আমাদের বাবা-চাচারা তখন সবাই মিলে কোরবানি দিতেন। কখনো কখনো আয়-রোজগার বেশী থাকলে দুই-একজন একা একা আলাদাও দিতেন, আবার অনেকসময় ২-১জন হয়তো কোরবানি দিতেনই না। আব্বু সবসময় ভাইদের সাথে দিতে ভালোবাসতেন। হাতে টাকা বেশী থাকলেও উনি আলাদা একা দিতেন না। কম থাকলেও কোরবানি দেয়া বাদ দিতেন না, কোনভাবে ম্যানেজ করে নিতেন। আমি যখন ফাইভ বা সিক্সে পড়ি এরকম সময়ে কোরবানির শরীকদের মধ্যে একজন আব্বুর সাথে কোনো পার্সোনাল কারণ নিয়ে ঝগড়া করে বসেন। যার সাথে ঝগড়া হয় উনি খুব তেড়িয়া টাইপের মানুষ আর এদিকে আব্বু আবার একটু আলাভোলা টাইপের। আব্বু ওই ঝগড়া নিয়ে মাথা ঘামাননি। দশটা পাতিল এক জায়গায় থাকলে ঠোকাঠুকি হবেই, তাতে কি। ওইদিকে ওই শরীক বাকিদের কিভাবে কিভাবে যেন ভুংভাং বুঝায়ে কনভিন্স করে ফেলসেন যেন এবার সবাই আলাদা আলাদাভাবে কোরবানি দেয় অথবা এবার আব্বু একা কোরবানি দিবেন, তারসাথে যেন শরীকানা নিয়ে আলাপ না করা হয় এরকম কিছু একটা। এদিকে আমাদের পরিবার কিছুই জানতো না। আমাদের শরীকানা থেকে আমাদের অজান্তেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়। ওই বছর আব্বুর ফিনানশিয়াল অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না। বলতে গেলে টানাটানিই ছিল। কোরবানি ওয়াজিব ছিল, তবে হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। ঈদের যখন আর মাত্র ৫-৬ দিন বাকি, গরুর বাজেট ঠিক হবে, তখন আব্বুকে জানানো হলো আব্বুকে তো এবার শরীক হিসাবে রাখা হয় নাই। পার্টনার ঠিক হয়ে গেছে। ২জন আলাদা কোরবানি দিবেন। আর বাড়ির সবার শরীকানার গরুতে নাকি এবার বাইরের লোক নেয়া হয়েছে, আব্বুকে বাদ দিয়ে। এরকম কষ্ট আব্বু জীবনে পান নাই। চোখে পানি এসে গেছিলো ভদ্রলোকের। হাতে টাকাও নাই যে একা দিবেন। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আমারও কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিল। এক আব্বুকে এরকম অবস্থায় দেখে, দুই আমরা কোরবানি দিতে পারবো না, এই কথা জেনে। আম্মু সাহস দেন আব্বুকে। আব্বু যেভাবেই হোক একাই দিবেন ঠিক করেন। উনার কাছে ছিল ছয় হাজার টাকা আর আম্মুর অনেকদিনের জমানো ছিল হাজার তিনেক টাকা। এরমধ্যেই হাসিল, কসাইসহ সব খরচ সমাধা করতে হবে। তাতে আব্বুর আপত্তি নাই। উনি উনার ওয়াজিব আদায় করতে পারবেন জেনেই খুশি। কোরবানি দিতে পারবেন এই আনন্দে উনার মধ্যে নতুন উদ্যম এসে গেলো। প্ল্যান করলেন বাজেট কম দেখে মানিকগঞ্জ চলে যাবেন গরু আনতে, ঢাকার হাটের থেকে ভালো হবে। আর যেই দুইজন আলাদা দিচ্ছিলেন তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করলেন ঢাকা থেকে সকালে পিকআপ নিয়ে গিয়ে গরু কিনে ওইদিনই চলে আসবেন। পিকআপ ভাড়াও হয়ে গেল। আমি মানুষটা তখন ভীতু হলেও অন্তত এটুকু বুঝতে পারসিলাম, আমার বাপটা আজকে একা। যাদের সাথে আব্বু হাটে যায় তারাও তো আজকে আলাদা, আব্বু একা একাই অনেকদূরে যাবেন আমাদের গরু আনতে। যদিও সাথে অন্য চাচারা যাচ্ছেন তাদের গরু আনতে কিন্তু আব্বুর গরু আব্বুর একাই কিনতে হবে। আর একটা জিনিস আমার মনে হইলো। ছোট হোক, বড় হোক এবার আব্বুর একা একটা আলাদা গরু হবে। হয়তো এখন থেকে প্রতিবারই তাই হবে - আব্বু আম্মুর কথায় এরকমই মনে হচ্ছিল। দুইজনই অনেক কষ্ট পাইসিলেন। ঠিক করসিলেন এ-ব্যাপারে আর কখনো অন্য কোন মানুষের মুখাপেক্ষী থাকবেন না। আমাদের নিজেদের গরু নিজেদের কিনতে হবে, আব্বুর একারই কিনতে হবে। ঠিক করে ফেললাম যেভাবেই হোক, যত ভয়ই লাগুক আমি আব্বুর সাথে যাবো। আব্বু একা যাবে না। আব্বুকে বলতেই আব্বু খুবই খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেলেন। ভুলেই গেলেন আমি ভীতু দেখে আমাকে উনি আর কখনো নিবেন না বলে দিসিলেন।যাইহোক, যাওয়ার দিন পিকআপে উঠতে গিয়ে দেখি যারা শরীকানায় গরু দিবেন তারাও এখন আমাদের সাথে যেতে চাচ্ছেন। নেয়া হলো তাদেরকেও। এই প্রথম আমি গ্রামের হাটে যাই। শুধু গ্রামের হাটে কেন, এই প্রথম আমি কোন হাটের ভিতর যাই। এই প্রথম আমাদের বাপ-ব্যাটার একসাথে ঘুরে ঘুরে গরু কেনা হয়। এই প্রথম খোলা পিকাপে বসে যাওয়া আসা হয় আমার। কিসের ভয়, কিসের কি! যদিও গাড়ি ছিল তবু আমি যাওয়ার সময় পিকাপের পিছনে বসে গেছি, আসার সময় গরু পিছনে রেখে বাপ-ব্যাটা পিকাপের ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আসছি। গরুর দাম ছিল সাড়ে সাত হাজার টাকা। বাকি দেড় হাজার টাকায় পিকআপ ভাড়ার শেয়ার, কসাই খরচ, গরু পালার খরচ, বখশিশ ইত্যাদি সব খরচ মেটানো হয়। দাড়োয়ানের সাহায্য নিয়ে আমি নিজেই গরু পালি, খাবার দেই, সাথেই থাকতাম সারাক্ষণ। ওই বছর বাড়িতে ওই গরুটাই সবচেয়ে ভালো হয় আলহামদুলিল্লাহ। পরের বছর পার্টনার না পেয়ে আব্বুকে আবার শরীকানায় সামিল হবার জন্য অনুরোধ করা হয়। আব্বু আর রাজি হন নাই। যদিও উনি উনাদের মানা করে দেন, কিন্তু বাসায় এসে খুব মন খারাপ করে ছিলেন। মনে মনে তিনি একসাথেই কোরবানি দিতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু অপমান মেনে নিয়ে বারবার ইউজড হতে চাননি। আল্লাহর কি আজব খেল, যার কৌশলে আব্বু শরীকানা থেকে বাদ পরে যান সেই উনি গত এতগুলো বছরে ২-৩বারের বেশী কোরবানি দিতে পারেননি। যদিও উনিও গরুপাগল মানুষ। অন্যের গরু কিনে দেন, নিজে শরীক হতে পারেন না। তবে গত দুইবছর দিতে পেরেছেন আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই সবসময় পারুন, ভালোভাবে পারুন। উনি দিতে না পারাতে আব্বু-আম্মু উনাকে আলাদাভাবে একটা বড় অংশ পাঠিয়ে দিতেন। আজও দেয়া হয় আলহামদুলিল্লাহ। যাই হোক, সেই আমাদের বাপ-ব্যাটার পার্টনারশিপের শুরু। তখন থেকে আমরা বাপ-ব্যাটা একসাথে হাটে যেতাম আসতাম, গরু কিনতাম। মানিকগঞ্জ থেকে বেশ কয়েকবার কিনি, এরপর ঢাকা থেকেই কেনা হতো। টাকার কষ্ট আল্লাহ আর দেন নি। প্রতিবছর আগের বছর থেকে বেশি সাহায্য করেছেন। বার্গেইনিং এর দায়িত্ব ছিল আব্বুর, কেনার পর আনার-পালার দায়িত্ব ছিল আমার। কসাই দিয়ে গরু কাটানোর দায়িত্ব আব্বুর, সাথে যোগালির কাজ করার দায়িত্ব আমার। ১০১টা বাড়ির মাংস দিয়ে আসার দায়িত্ব ছিল আব্বুর, ২-১টা আমার। এভাবেই চলছিলো। একসময় আব্বুকে ছাড়াই হাটে ঘুরতে যেতে শিখে যাই। স্কুল পালায় হাটে কত ঘুরসি হিসাব নাই। সবচেয়ে বেশি যেতাম কমলাপুর। এছাড়া মেরুল-বাড্ডা, নয়াবাজার(১-২বার), গাবতলি তারপর শাহজাহানপুরেও যাওয়া শুরু হয়। স্কুলের বদলে একসময় কলেজ পালানো, তারপর ভার্সিটি থেকে বাংক মারা শুরু হয়। সবসময় টার্গেট একটাই থাকতো, আব্বুর জন্য বাজেটের ভিতর সেরা গরুটা কিনতে হবে। দেশী ষাঁড়, ছোটখাটো, দুই দাঁত (৪ দাঁতও চলে, তবে ২দাঁত হলে বেশি ভালো হয়)। এক কোরবানির ঈদের আগে আগে কি হইলো কে জানে, আমার হাতে একটা খাম ধরায় দিয়ে আমার পার্টনার গরু কোরবানির পুরো ভার আমার হাতে দিয়ে কয়েকদিনের জন্য আল্লাহর ঘরের মেহমান হতে (হজ্ব) চলে গেল। সেই যে গেল, এতগুলা বছর হয়ে গেল আর ফেরত আসলো না, আর আসবেও না। শুনসি আল্লাহর ঘরের মেহমান ছিলেন, আল্লাহ নিজের কাছেই রেখে দিসেন। আমি আর দেখতে পাব না। এখন থেকে উনার কোরবানির ব্যবস্থা আমার একারই করতে হবে। করে যাচ্ছি। এখন আমি নিজের ব্যবসা থেকে নিজেই পালায় যাই। পালায় গিয়ে এখনো হাটে আব্বুর জন্য আমার স্বল্প ক্ষমতার মধ্যে একটা দেশী ষাঁড় গরু খুঁজি, ছোটখাটো, দুই দাঁত। জানি না এই বছর পারব কিনা। ইয়া মালিক, আজ এতবছর ধরে আমরা বাপ-ব্যাটা হারি নাই, নিরাশ হই নাই, তোমার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হই নাই। এইবছরও আমাদের থেকে মুখ ফিরায় নিও না। এই গ্রুপটায় এতগুলা মানুষ, আমাদের-আমাদের বাবামায়ের-আমাদের পরিবারের যার কোনো নেক আমল তুমি কবুল করেছ, সেই নেক আমলের ওসিলায় তুমি এইবারও আমাদের সবার নসীবে কোরবানির তৌফিক দিও, আমাদের হায়াত দিও, সুস্বাস্থ্য দিও। পুরো পৃথিবীটাকে আবার সুস্থ করে দিও। আমি আব্বুর গরু কিনতে যেতে চাই। দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তো।
সবার আগে ধন্যবাদ দিতে চাই Arif Rafsan ভাইকে আমাকে গল্প লিখার জন্য নমিনেট করার জন্য। আজ আমি ছোট করে শেয়ার করবো আমার ২০০৭ গরু কেনার কাহিনি। ওই কুরবানির ঈদের কিছু দিন আগে আমাদের গ্রামের বাড়ীর কাজ শুরু করলো আব্বু। উনি প্রতি সপ্তাহে গ্রামের বাড়ী যেতো আসা যাওয়ার মাঝেই থাকতো। ঈদের ৮ দিন আগে আব্বু আবার গ্রামে গেলো মালামাল কিনে দিতে আর লেভারদের টাকা দেয়ার জন্য। আমি তো এই দিকে ঢাকায় আব্বু জন্য অপেক্ষা করছি কখন আব্বু ঢাকায় আসবে। আমি আব্বুকে নিয়ে হাটে যাবো। ঈদের বাকী আর মাএ ৪ দিন আব্বু আসতাছে না আমার তো আর তর সইছে না এক কথায় পাগল হয়ে গেছে একটু পর পর আব্বুকে ফোন দিয়ে জ্বালাইতাছি কখন??? রওনা দিবে। একটা সময় আমাকে আব্বু রাগ হয়ে দমক দিয়ে বল্লো এতো পাগল হইছিস কেন??? আমি তো একটা কাজে আসছি নাকি??? না আসবো না আমি ঢাকায়। এবার কুরবানির ও দিবো না এই কথা বলে ফোন কেটে দিলো। একথা বলার পর আমার মনের অবস্থা বুজেন কেমন হতে পারে???।নিজের রুমে চলে গেলাম আর দরজা বন্ধ করে দিলাম। মা এতো ডাকলো ভাত খাওয়া জন্য রুম থেকে আর বেরই হলাম না। পরে আম্মু আব্বুকে ফোন দিয়ে সব বল্লো আমার কথা। তখন আব্বু বল্লো ছেলেকে বলে দেও আমি একটু পর রওনা দিবো আসেই গরু কিনতে যাবো। এই কথা শোনার পর মনটা ভালো হয়ে গেলো ওয়েট করতে লাগলাম আব্বু জন্য আজ যতরাত হোক না কেন আজই হাটে যাবো। রাত আনুমানিক ১১ টা আমি ভাত খেইতাছিলাম।হঠাৎ বাসার নিছে পিকাপ এর শব্দ আর আব্বুর গলার ওয়াজ শুনতে পেলাম আমি খাবার রেখেই দৌড়ে বারান্দায় গেলাম গিয়ে দেখি গাড়ীতে একটা লাল কাল রঙের দেশাল আর গির এর ক্রস টাইপের বড় সাইজের একটা গরু কাচপুর থেকে ৩৮০০০ টাকায় কিনে নিয়ে আসছে। আব্বু দারোয়ান দিয়ে গরু নামাচ্ছে আমি দোতলা থেকেই বল্লাম আব্বু এটা কাদের গরু???? আব্বু বল্লো আমাদের গরু জলদি নিচে আসো। তখন গেলো মনটা খারাপ হয়ে আমাকে ছাড়াই গরু কোন কিনছে??? আমি আর নিচে নামলাম না। কিন্তু এদিকে মনের ভিতরও বেকুল হয়ে আছে নিচে গিয়ে গরুটা দেখে আসি যত যাই হোক গরু পাগল তো। আমি আবার ছোট বেলা থেকেই একটু ঘাড় তেরা আমি আর জেদ করে নিচে নামি নাই। গরুর সামনেও যাই নাই। আব্বু গরু বেধে সব কিছু গুছায়া ঘরে ডুকে আম্মুকে বল্লো তোমার পোলার আবার কি নাটক শুরু হইছে??? গরু কিনলেও দোষ কিনতে দেরী হলেও দোষ নাকি??? বেশি আদর করি তো তাই মাথায় উঠে গেছে এমন মাইর দিমু সব ভুত মাথায় থেকে নেমে যাবে।তখন আমার আম্মুও রাগ হয়ে আব্বুকে বল্লো তুমিও তো নাটক কম জানো না। তোমাকে কে কইছে গ্রাম থেকে আসার সময় একদম গরু কিনে আসতে??? পোলা বসে রইছে তোমার লগে হাটে যাবে পছন্দ কইরা গরু কিনবো আর তুমি কি করলা??? আসার সময় গরু কিনে নিয়ে আসলা।ঈদ তো পোলাপান এর জন্য নাকি??? এই বলে আম্মুও পাশে রুমে চলে গেলো। আমি আমার রুম থেকে বসে বসে আব্বু আম্মু জগড়া শুনতাছি আর আমার চোখ দিয়ে পানি পরতাছে এমন আবস্থাতে আমিও ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে আব্বু নাস্তা খাওয়ার সময় আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো ছেলের মাথা থেকে ভুত নামছে???১০টা বাজে ঘুম থেকেই তো উঠে নাই। অন্য এই সময় তো ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠে গরুর পাশেই বসে থাকে আরো কিনো গরু একা একা এই বলে আম্মুও নাস্তা না খেয়ে উঠে গেলো। আব্বু চিন্তা পরে গেলো গরু কিনে তো মহা বিপদে পরে গেলাম ।তখন আব্বু নাস্তা করে আমার রুমে এসে দেখে আমি বসে আছি। তখন আব্বু বল্লো কি বেপার তুমি এখনো বসে আছো???? ওই দিকে তোমার গরু তো না খেয়ে বসে আছে। যাও গরুকে কিছু খেতে দাও। তখন আমি বল্লাম না ওই টা আমার গরু না আমার গরু হলে আমি নিজে যেয়ে কিনতাম। আমার এই অবস্থা দেখে আব্বু বল্লো চলো রেডি হয়ে নিচে নামো আমি বল্লাম কেন??? তখন আব্বু বল্লো তোমার জন্য আর একটা গরু কিনতে যাবো গাবতলী চলো। আমি তো অবাক কি??? আব্বু আর একটা গরু কিনবে??? খুশিতে আমি শেষ। লগে লগে রেডি হয়ে নিচে নেমে গেলাম। নিচে গেটের সামনেই রাতে আনা আব্বুর সেই গরুটা বাধা। গরুটা দেখার সাথে সাথেই গরুটার প্রেমে পরে গেলাম এতে ভালো লাগছিলো কি বলবো???কিন্তু আমি আর আব্বুকে বল্লাম না যে গরুটা আমার খুব পছন্দ হইছে চলে গেলাম গাবতলী হাটে। হাটে ডুকেই আব্বু গরু দেখতে লাগলো। তখন আমি আব্বুকে বল্লাম আচ্ছা আব্বু আমরা তো গরু কিনছিই তাহলে এক কাজ করি একটা বড় ছাগল নিয়ে নেই কি বলো??? আব্বু একটু রাগ হয়েই আমার দিকে তাকাইলো বল্লো আচ্ছা তুই কি চাস??? আগে ওইটা ফাইলান কর। তখন আমি একটা খাসীর দিকে আঙুল দিয়ে বল্লাম আব্বু আমার ওই বড় খাসীটা পছন্দ হইছে আমি ওই খাসীটা কিনবো। তখন আব্বু সেই খাসীটা কিনে দিলো ৯ হাজার টাকা দিয়ে।তখন মনের সুখে খাসী নিয়ে বাসায় চলে আসলাম (তখন ৯ হাজার টাকার খাসী অনেক বড় সাইজের ছিলো ওই খাসী কিনার গল্প টা আর একদিন শেয়ার করবো) এই ছিলো আমার ২০০৭ গরুর গল্প । আশা করি ভালো লাগবে।
আসসালামু আলাইকুম। সবার কোরবানির গরু কেনার গল্প দেখে আমিও লিখবো লিখবো করে লিখেই ফেললাম। একদম শুরু থেকেই শুরু করছি।এই গ্রুপটির মতো ২০১৫ সালে আমিও একটা ক্যাটেল গ্রুপ খুলেছিলাম (Amra Goru Pagol Bhai-Brother - AGPB ) নামে । যেহেতু আমরা প্রত্যেকটি গ্রুপই এক একটা পরিবারের মত। সেহেতু আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিগত দুই বছর যাবত আমরা কোরবানি ঈদে আমাদের গ্রুপের সকলের সাধ্যমত একটা কোরবানির গরু এতিমখানায় দান করি। আজকের গল্পটা ২০১৯ সালের চাঁদ রাতের দিন সকালবেলার।যেহেতু গ্রুপের পক্ষ থেকে কেনা গরু সেহেতু গ্রুপের আরেক এডমিন Rafe Mamun আর আমি মিলেই গেলাম কোরবানির গরু কিনতে, পথিমধ্যে ৩ জন ছোট ভাই ও যুক্ত হয়েছিল আমাদের সাথে।টাকা যা উঠেছিলো সব নিয়েই রওনা হলাম ইস্টার্ন হাউসিং হাটে। ভাগ্যক্রমে গতবছর চান রাতের দিন দাম তুলনামূলক কম ছিল তাই আমাদের গরু কিনতে খুব একটা সময় লাগেনি। গিয়ে পছন্দ করা ও দামাদামি করা শুরু করলাম।সাদা একটা গরু পছন্দ হলো, বেপারীর সাথে বেশ খানিকক্ষণ কথাবার্তা বললাম কিন্তু ৪০ হাজারের নিচে সে দিবেই না। তারপর একটু চা নাস্তা খেয়ে খুব রিলাক্স মুডেই আবারো হাটে ঢুকলাম।যেহেতু গরুর দাম কম ছিল সেহেতু বুঝা হয়ে গিয়েছিল যে একটা না একটা হয়েই যাবে। নওগাঁর এক বেপারির ২০ টার মত ছোট সাইজের গরু নিয়ে এসেছিল। যার ৯ টাই ছিলো অবিক্রিত।তাই খুব রিকোয়েস্ট করে বলল যে বাবা আমার থেকে নিয়ে যাও ভালো একটা গরু দিবো। ভাগ্যক্রমে ২০১৮ সালে আমরা এতিমখানায় যে গরুটা দিয়েছিলাম দেখতে হুবহু আরেকটা গরু পেয়ে গেলাম উনার কাছে। তাই ভাবলাম এটাই নিবো।শুরু করলাম দামাদামি, আমি ৩১ হাজার পর্যন্ত বলে চলে গিয়েছিলাম, উনার শেষ ছিল ৩৫।তারপর খানিকটা দূরে গিয়ে আমি অন্য গরু দেখছিলাম এরই মধ্যে উনার ছেলেকে ডেকে পাঠালো আমার কাছে। কিছু বাড়িয়ে নিয়ে নিবো এই ভেবে উনার সাথে গেলাম, আমি যাওয়ার পর উনি আমাকে জরিয়ে ধরে বলল "বাবা এতিম খানার জন্য গরু টা নিবেন আমারটাই নেন, এই গরু গতকালকে ৪০,০০০ বলছে দেইনাই, এখন বাজার খারাপ বাবা আপনি গরু টা নিয়ে যান! "আমি বললাম - চাচা আর ৫০০ টাকার বেশি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, আমি সামনে আরো দুই একটা গরু দেখছি ওখানে গরু আরো পছন্দ হয়েছে। দিলে দিয়ে দেন। ব্যাস রাজি হয়ে গেল ৩১,৫০০ টাকায়। ধরতে গেলে মোট ৪০ মিনিটের আগেই গরু কেনা শেষ। এরইমধ্যে ফোন দিল Shahriar Porosh ভাই, উনার ছোট ভাইয়ের জন্য আরেকটা গরু কিনতে আসছে।উনারা নাকি একটা গরু দেখছে সেটা দেখার জন্য ডাকলো আমাকে। গিয়ে দেখি আমরা যে সাইজের কিনেছি ৩১,৫০০ টাকায় ওটার সমান গরু নিয়ে ৪৫,০০০ টাকায় দাম দর করে বসে আছে। বললাম চলেন ভাই আমি যার কাছ থেকে গরু নিয়েছি উনার কাছে আরো গরু আছে। নিয়ে এসে বললাম চাচা আর একটা গরু দেন আমার এই ভাইকে। ব্যাস ছোটখাটো একটা গোলগাল গরু বের করে নিলাম।এটা নাকি ৪৫,০০০ টাকার নিচে দিবেনা। ততক্ষনে নেমে গেছে আবার বৃষ্টি, উনাদের ট্রিপল এর নিচে ততক্ষণে আমাদের সবার সাথে উনার ছেলেদের এবং উনার ভাইদের সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে গেছে। বৃষ্টির মধ্যে উনাদের সাথে আড্ডাটা কখনো ভুলবো না। তারপর আর কি চাচা কে ইমোশনালি বুঝিয়ে ৪০,০০০ টাকায় রাজি করে ফেললাম।চাচা ততক্ষনে আমাদের বন্ধুর মতো হয়ে গেছে। আমাদের গরুর টাকা বুঝে পেয়ে আমাদের শিখানো পন্থায় আমাকে দিয়েই গরুর পাছায় থাপ্পড় দিয়ে দিলো।ব্যাস আলহামদুলিল্লাহ দুই গরু নিয়ে আমরা চলে আসলাম।হয়তো এতিমখানার গরুটা সাইজে অনেক ছোট ছিল। তবে আমাদের নিয়ত ও কিনতে পারার পর আমাদের খুশিটা ছিল আকাশছোঁয়া আর এতিমখানা ছাত্ররা যখন এই গরুটি পায় তাদের উল্লাস দেখে যে আনন্দ লেগেছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।গরুটি দুটি এতিমখানায় সমান দুভাগে ভাগ করে দিয়েছিলাম।রিযিকের মালিক আল্লাহ আমরা একটি মাধ্যম মাত্র। আশা করি আপনারাও উৎসাহিত হয়ে আগামী ঈদে আপনাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এরকম উদ্যোগ নিবেন। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা'আলার বলে গল্পটি শেষ করছি। গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
গরুর পিক টা নাই, আর গল্প গুসাইয়া লিখতে পারি না, তাই আগেই মাফ চাই, শুধু Sajbir এই কারণে লেখা, ২০১১ সালের গরুর ক্রাইসিস এর কথা সবার ই জানা,আমি, আমার চাচাতো ভাই মুক্তার, আর বন্ধু রানা এই ৩ জন মিল্লা গেলাম গাবতুলির হাট এ। হাটে ঢুকার আগে একটা মুরুব্বী একটা লাল ষাড় নিয়ে দারাইয়া আছে, জিজ্ঞেস করলাম চাচা কতো চান বললো একদাম ৪২০০০. আমি ৩৫০০০ বইলা ৩৭০০০ এ দিল করলাম কিন্তূ হাটাইতে যাইয়া দেখি পা খোরায়টাসে, পরে আর নিলাম না, ভিতরে যাইয়া দেখি গরু আছে অনেক কিন্তু যতই ভিতরে যাই ততই দাম বাড়ে, একপর্যায়ে দেখলাম গরু আস্তে আস্তে নাই নাই অবস্থা, মন খারাপ কইরা বসে পরলাম,শেষপর্যায়ে দেখলাম অল্প বয়সের একটা ছেলে সাদা একটা গরু নিয়া অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়াইয়া আছে, জিজ্ঞেস করলাম ভাই গরু কি তোমার, আর বেঁচবা কি না, বললো গরু আমার, আমি যাদের সাথে আসছিলাম তারা সবাই চলে গেছে, এখন এই গরুটা বেইচা যাইতে পারলেই বাঁচি,বললাম গরু কত চাও, বললো ৫৫০০০ দিয়েন, চাইয়া দাম শুইনা বুজলাম ও হাটের অবস্থা জানে না, তাই গরুটা হাত ছাড়া করা যাবে না,বললাম ছোট কইরা চাও গরু টা আমি নিবো, রাখল বললো ভাই আপ্নে বইলা নিয়া যান, কইলাম ৪০০০০ দেই, রাখল বললো ৫০০০০ এ একজন দাম বলসে দেই নাই, আমি বললাম এখন কি আর এই দাম পাবা, তারপর ৪২, ৪৩, বইলা ৪৫৫০০ দিয়া নিসিলাম। ঔ ক্রাইসিস সময় গরুটা মা শা আল্লাহ ভালই হইসিলো। আলহামদুলিল্লাহ।। আল্লাহ্ চাইলে সব ঠিক হইয়া গেলে আবার ও আমরা হাট থিকা গরু কিনবো। ইন শা আল্লাহ্ ♥️
আজকে আমি শেয়ার করবো আমার ২০১৬ সালের গরু কিনার গল্প। প্রথমি সবার থেকে মাফ চেয়ে নিবো আমি তেমন গল্প লিখতে পারি না, কোন ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন। আমরা সব সময় ১ম আমাদের আমবাগিচা হাট থেকে গরু কিনার চেষ্টা…
Old is gold গ্রুপ এ গরু কিনার গল্প পরতে পরতে অনেক আগে ফিরে গেলাম নিজের মনের অজান্তেশুরু করলাম ২০১১ সেই ভয়াবহ সাল দিয়েছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে হাটে যাওয়া গরু কিনা হত কারন আমি একাই চিলামপুরান ঢাকার মানুষ বলে আমার বাবার প্রথম পছন্দ ছিল বইল গরুসব সময় বাবা রাতে গরু কিনতে বের হত ঈদের ২দিন আগে গরু কিনা হই সব সময় রাতের খাবার খেয়ে বের হতে হতে ১১ টা বেঁজে গেল বাসা থেকে বের হইয়ে ১ম গেলাম শ্যামপুর বালুর মাঠ হাটে মুলত দেখবো দামে হলে কিনে ফেলব এমন তাই ছিল মনে মনে হাটে অনেক গরু কিন্তু অই যে বলদ পছন্দ দেখি পছন্দ হলে দামে হই না বেযে গেল রাত ৪ তা আব্বু বলল আজকে আর হবে না চলো বাসাই চলে জাই আবার কালকে বের হল বাসাই চলে গেলাম পরের দিন সারা বেলা হাট গুরু আবার বের হলা আব্বু কে নিয়ে আজকে নয়াবাযারের দিকে রিকশা নিয়ে রওনা দিলামদেখা সুরু করলাম চিত্রা সিনেমা হলের সামনে থেকে দেকি দাম করি মিলে না বাজেট ৮০-৯০ এর মদ্ধেতখন রাত ২ বাজে আব্বু বলল যে এই হাটে আর হবে না চলো ফুতুল্লা চলে জাই অনেক বলদ পাওয়া জাই অই হাটে সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম অনেক গরু কিন্তু দামাদামি করতে ঘুরতে ঘুরতে ফজর আজান দিয়ে দিল কিন্তু গরু কিনা হল না আমার মন অনেক খারাপ কি আর করার বাসাই এসে পরলাম আব্বু বলল যে ২-৩ ঘন্টা গুম দেও সকাল সকাল বের হব চাঁদ রাত আজকে আল্লাহ পাক কিছু ১তা মিলায়া দিবে আর কি গুম আসে কখন সকাল ১০ তা বাজব আমি আমি হাটে যামু আবার সেই শ্যমপুর হাটে গিয়া তো মাথাত হাত যে গরু দেইখা গেলাম ফজরের সময় গরুই নাই জাই আসে কাস্টমার ১ তা গরুর পিছে ৫০ জন এমন অবস্তা যে গরুর রসি পাওয়া তা কপালের বেপার এই অবস্তা দেখে আর দেরি না করে সাথে সাথে আবার নয়াবাযার এ অও ১ই অবস্তা এখন কি আর বইল দেখার সময় আসে রে ভাই আমার পা সমানে কাপ্তে সুরু কইরা দিসে এমন অবস্তা দেখে আব্বুর সাথে হালকা রাগারাগি করলাম এখন দেশি গরু দাম করি দাম আকাশ ছোয়া হাত দেওয়া জাই না দুপুর হয়ে গেল আব্বু আমি সকাল থেকে না খাওয়া আব্বু বলল যে কিছু খেয়ে দেখি না হলে আর কি করা যাবে হইত আল্লাহ এই বার করবানি জন্য কিসমতে কিছুই রাখে নাই এই কথা সুনার পর ভাই সত্যি কথা আমি মাটিতে বইশা পরলাম নিজেকে অনেক অসহায় মনে হল যে টাকা নিয়া গুরাতছি কিন্তু গরু কিনতে পারবো না তখন বাবু বাজার নিচ দিয়ে মাজার সামনে থেকে রিকশা নিয়ে বাসাই চলে জাব ইসলাম পুর দিয়ে বের হব আমি অনেক দূর আগাই গেছি অন্ন কন খেলাল আমার আর নাই রিকশা নিয়া পিছনে তাকাই দেখি আব্বু নাই কই গেল দেখি আব্বু মাজারে সামনে ১বেপারির সাথে কথা বলতাছে ওনার ২ তা গরু চিল ১ বর আরেক তা এক্তু ছোট তো ছোট তা বিক্রি হইয়ে গেছে ৮৫ হাজার এখন আব্বুর তো আইডিয়া বুইজা গেছে যে বর তা কত হলে বিক্রির করবে আব্বু তো আর গরুর রশি ছারে না ৯০ থেকে সুরু করলাম আল্লাহ না নিয়া বেপারির এক ই কথা ১ লাখের উপরে বলতে হবে ৯৫ না দিব না ৯৮ দিবে না পরে পুরা ১দিয়া গরু কিনলাম এখন হাসিল করার টাকা তো হবে না পরে কাক কে বললাম যে কাকা ১০ হাজার টাকা বাসাই জাইয়া নিতে হবে গরু আর নাই বিক্রি হইয়া গেছে তাই বেপারি কাকা আর না করতে পারল না ওনার ছেলে কে দিয়ে দিল আমাদের সাথে গরু নিয়ে বাসাই আস্তে আস্তে সন্ধ্যা টাকা দিয়ে সাথে আরও ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে দিলো আব্বু রিকাশা দিয়ে জাওয়ার জন্য আমার অবস্তা অনেক খারাপ হইয়া গেচিল পা দেখি অনেক ফুলে গেছিলো ওই দিকে দেখে কে গরু তো কিনা হইছে বেস আমারে আর পাই কেএই হল আমার ২০১১ সালের গরু কিনার পরে জানতে পারি আমাদের এলাকার অনেক এ নাকি ঢাকার বাইরে চলে গেছে গরু কিনার জন্য অনেক আবার ঈদ ওইখানএ করছে তার পর গরু নিয়ে ঢাকা তে আসছে সারা জীবন মনে রাখার মত ১ তা বছর ২০১১ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিবেন
ফেসবুকে আমার প্রথম যে গরুর ছবি দেয়া ছিল, সেগুলা ছিল আমাদের ২০১০ এর কোরবানির। ওইটার ছবি দিয়েই আমার এই ভার্চুয়াল হাটের জগতে বিসমিল্লাহ। ওই গরুটা আমার অন্যতম ফেভারিট গরুও, কিন্তু গরুটা কেনার ঘটনা নিয়ে আমি কখনো বিশেষ উচ্চবাচ্য করি নাই। লজ্জা লাগতো। এর কারণ আছে। আমার গরু কেনাও ছিল আমার লেখা গল্পের মতো। দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার! আমার বাপজানের ছিল আবার উল্টা কেস! আমি যেখানে ৭ দিন লাগায়ে দিতাম ২-১টা গরু কিনতে, সেখানে আব্বু প্রতি ৭ মিনিটে ২-১টা গরু কিনে ফেলতে পারতো। ২০১০-এও তার এই কারিশমা দেখা গেছিল। ওই সময় আমরা গরু কিনতাম চাঁদরাতের আগেরদিন। আর এর আগেরদিন আব্বু আমার সাথে এলাকার হাটে যাইতো দরদাম বুঝে আসতে। যথারীতি ওই বছরও ঈদের দুই দিন আগে বাপ-ব্যাটা শাহজাহানপুর হাটে গেছি, সাথে দুই কাজিন ছোটভাই আর দাড়োয়ান চাচা ছিল। মেইন হাটে ঢুকার আগে মেইন হাটের উল্টা পাশের ছোট মাঠটায় দামটাম যাচাই করে দেখা শেষ। ঘুরে দেখতে আব্বু বেশ ভালো টাইম নিচ্ছিল। এমনিতে সে ২-৩টা গরু দেখে এক-দুই কথায় গরু কেনা টাইপ পাবলিক ছিল। এত সময় নিয়ে ঘুরপাক খাওয়ার মতো মানুষ না। কিন্তু ওইবার বুঝা যাচ্ছিল এইখানকার দামদর আব্বুর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। বলল, চল মেইন হাটে গিয়ে দেখি, এইখানে বেশী বেশী চায়। আমার তাতে কোনও আপত্তি নাই কিন্তু সমস্যা হল গিয়ে তখন আমি ছিলাম চেইনস্মোকার। একটু পরপর দম নেয়া লাগত। তার উপর তখন আবার একজনের সাথেই দিনে কয়েকবার করে ফোনে কুশলাদি বিনিময়ের প্রয়োজন হইতো। সেও অনেকক্ষণ ধরে অস্থির হয়ে আমার ফোন ভাইব্রেট করাচ্ছে, সাথে সাথে আমিও ভাইব্রেট হচ্ছি। এই পরিস্থিতিরও একটা বিহিত হওয়া দরকার। তো, আব্বু ওইপাশে যেতে চাইতেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ফেললাম। আব্বু আর কাজিনদের পিছন পিছন আসার ভান করে আব্বুরা একটু আগায় যাইতেই পিছনে ঘুরে আবার আগের জায়গায় এসে কানে ফোন আর মুখে বিষকাঠি নিয়ে নিলাম। হয়তো আজকে আব্বু বেশি সময় ঘুরবে ভেবে ইচ্ছা ছিল পরপর দুই কাঠি দম একবারে নিয়ে নিব। চোখ ছিল মেইন হাটে ঢুকা-বের হওয়ার পথের দিকেই। দ্রুত টেনে একটা শেষ করে ওইটার আগুনেই আরেকটা জ্বালাইসি মাত্র, এইসময় দেখি আমার দুই কাজিন আর দাড়োয়ান চাচা একটা তেজী টাইপের গরু নিয়ে মেইন হাট থেকে বের হয়ে ছুটতে ছুটতে বাসার দিকে যাইতেসে। প্রথমে ধন্দা খায়ে গেসিলাম! পরে আমিও পিছন পিছন দৌড়াইতে দৌড়াইতে চিল্লাইতেসি, "ওই কিরে এটা কার? কেম্নে? কেন? কত?" ছোটভাই পিছনে ঘুরে আমাকে দেইখাই বলে, "তুমি কই ছিলা মিয়াঁ? তোমার গরু! বিড়ি ফালাও! চাচ্চু পিছনে!" এইটা কোনো কথা! লিটারেলি মাত্র ৫-৭ মিনিট হইসে বাপটারে একা একা দুই পা ঘুরাফিরা করতে দিসি, এরমধ্যেই ঘটনা ঘটায় ফেলসে! ইচ্ছা হইসিলো ওইখানেই ল্যাটা খায়ে বইসা কতক্ষণ বিলাপ কইরা কান্দি, কিন্তু বিড়ি হাতে পিছন ঘুরে একটু দূরেই বাপরে দেখে দুই পায়ে আচমকা স্পিড উঠে গেল! এক দৌড়ে গরু নিয়া বাড়িতে! ওইবার হাটে গরু কেনার সময় থাকা অবস্থায়ও নিজের গরু নিজে কিনতে পারি নাই। কেনা দূরস্ত পছন্দও করতে পারি নাই। একটা বিড়ি খাইতে গিয়া সব মিস হয়ে গেছে! এগুলা কাউরে কওয়া যায়!
যারা নিজে কোরবানির হাটে গিয়ে গরু কেনার অভিজ্ঞতা রাখেন তাদের জন্য ২০১৩ সালটা ছিল কিছুটা অদ্ভুত। কারণটা ব্যাখ্যা করি। এটা ছিল কোরবানির বাজার নিয়ে হাল্কাপাতলা গুজব চালাচালির বছর। ২০১১ সালে গরুর বাজারে যে আকাল চলে আর দামের দাবানল লাগে সেটা যেমন প্রায় সবার জানা তেমন আবার এর ঠিক পরের বছর ২০১২তেই গরুর বাজার পরে যাওয়ার কথাও নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। পাল্টাপাল্টি এই দুই বছরের বাজার উত্থান-পতনের একটা প্রভাব পড়ে ২০১৩ সালে। ক্রেতা বিক্রেতা দুই পক্ষই ছিলেন একটু অনিশ্চয়তার মধ্যে। এখন হাটে গেলে বিক্রেতাদের ভিতরে ভিতরে একটা জোটবদ্ধ একরোখা ভাব নিশ্চয়ই টের পান... ২০১৩তে এরকম ছিল না, তবে ধীরে ধীরে এর সূচনা হচ্ছিলো। যাই হোক, ওইসময় ক্রেতারা ২০১১ এর দগদগে ঘা যেমন ভুলেন নাই, বিক্রেতারাও ভুলেন নাই ২০১২তে শেষ সময় পর্যন্ত গরু ধরে রাখার লোভের ফল। ফলে বাজারে যে কয়েকটা চালু গুজব উড়তে শুরু করে তারমধ্যে কিছু হলো, "এবার ব্যাপারীরা গতবারের(২০১২) শোধ নিয়ে নিবে", "এবার বাজারে গরু বেশী ঢুকসে, ২০১১ এর বাজার দেখার পর যারা গরু পালা শুরু করসে তারা সবাই গরু নিয়ে আসছে। দাম পরে যাবে", "বেজোড় বছরে বাজারে আগুন লাগে, এবার ২০১১ এর মতো হবে", " বর্ডার খোলা, স্রোতের মতো গরু ঢুকতেসে"। ইত্যাদি ইত্যাদি। বুঝাই যাচ্ছে গুজবগুলি আসলে মানুষের পেটে পেটে বানানো আন্দাজি কথা ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু সব পক্ষের ভিতর উৎকন্ঠা জাগায় রাখার জন্য যথেষ্ট। যদিও আমার ব্যাপারটা ছিল একটু ভিন্ন। আমার মধ্যে কোন উৎকন্ঠা ছিল না, ছিল জিদ আর ডেস্পারেশন। ২০১১, ২০১২ এই ২টা বছরের কোনটাই আমার মনমতো হয় নাই, তাই ২০১৩তে আমি পুষিয়ে নিতে ডেস্পারেট ছিলাম। তার উপর ২০১২ তে আমার তখনকার প্রিয় হাট আফতাবে গরু পছন্দ করে রেখে যাওয়া, এমনকি নিজে একজনকে গরু কিনে দিয়ে বাসায় রেখে আবার আমারটা নিতে আফতাবে ফেরত আসার সময় বাপজানের হুট করে শাহজাহানপুর হাটে নেমে অন্য গরু কিনে ফেলার পর একবছর ধরে চাপা ক্ষোভ জমে ছিল। ঠিক করেই রাখসিলাম এবার আফতাব থেকেই কিনবো, আর একবারে বায়না করে হাসিল ঘরে নিয়ে বাপজানকে ফোনে জানাব, তোমার গরু আমার কেনা শেষ, নীরবে টেকাটুকা দিয়া আমাদের নিয়া যাও। প্লিজ। 😐 মিশন আফতাব সেট করা থাকলেও কমলাপুর আর শাহজাহানপুর হাট ঘুরে তামাতামা করতে বাকি ছিল না। আমি সাধারণত হাটে একা একা ঘুরতে বেশী পছন্দ করি, তবে ওইবার সাথে আমার ক্লোজ এক ফ্রেন্ড ছিল। ওর জন্যেও টুকটাক গরু দেখতেসিলাম। ওই ওরটা কিনে দিতে বলসিলো।৩টা হাটই দুই ফ্রেন্ডের ভাজাভাজা করা শেষ। কিন্তু কোথাও সুবিধা করা যাচ্ছে না। আমরা কিনতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত এই দামে আরো ভালো কিছু পাওয়ার আশায় ছেড়ে দেই, ব্যাপারীরাও ছাড়তে ছাড়তে শেষ মুহূর্তে আরো ভালো দাম পাওয়ার আশায় আটকে ফেলে। যেমনটা শুরুতে বলসি, সবাই অনিশ্চয়তায়। সবাই আরেকটু দেখতে চায়। যেদিন আমি গরু কিনলাম, ঈদের দুইদিন আগে, ওইদিনও এক অবস্থা। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা দুই বান্দা বাইকে করে রওনা দিসি আফতাবে। আফতাবের হাট তখন মেইনরোডের একদম কাছাকাছি থেকেই বসতো। বিশাল সাইজের হতো হাটটা। শুরু কোথায় জানা থাকলেও সারাদিন ঘুরেও শেষ আর খুঁজে পাইতাম না। আর হাটটা হতো বেশ ছড়ায়ছিটায়। এই বিশাল ছড়ানো হাটে সেই ভোর থেকে গরু দেখতেসি তো দেখতেসি। আমার বাজেট ছিল হাতে কিছু রেখে ৫০-৬০ আর বন্ধুর ম্যাক্সিমাম ৩০-৩৫। দুই রেঞ্জের গরু একসাথে দেখতে গিয়ে দুইজন আরো পেরেশান, কনফিউজড। ব্যাপারীরা দুপুরের পরে কাস্টমার এর ঢল নামার আশায় আছে। সকাল সকাল দড়ি ছাড়তে চায় না। আমিও না কিনে আর ফেরত আসবো না। এরমধ্যে ৫-৬ ঘন্টা কেটে গেছে। আমার ফ্রেন্ড পুরা এগজস্টেড। রোদে পুড়ে, ধুলা খেতে খেতে জিভ বের হয়ে যাচ্ছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো তখন আরেক ভ্যাজালে আমরা পরসি, আমাদের এলাকার এক বিরাট দরবার শরীফের(নাম নিলাম না) কয়েক পাল মুরিদ হাটে গিয়ে পালে পালে গরু কেনা শুরু করসে। ধমাধম গরু কিনে আবার নিয়ে যাওয়ার জন্য মাদ্রাসার পিচ্চি পিচ্চি পোলাপানদের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে, ওরা ২টা গরু কন্ট্রোল করতে পারলেও ১০টা ছুটে যাচ্ছে। পুরা হাটে দৌড়াদৌড়ি হুড়াহুড়ি অবস্থা। ব্যাপারীদেরও জোশ এসে গেছে, দাম ধরে ফেলতেসে। এরমধ্যে পরে আমরা দুই গরীব ইয়াতিম বান্দার মতো দাড়ায় আছি। খুবই বেকায়দা অবস্থা। 🥺 শেষে আমি ঠিক করলাম, এই অবস্থায় পারা যাবে না। বড় কাস্টমার পেয়ে ব্যাপারীরা এখন আর আমাদের দামও দিবে না। খামাখা ঘুরে মরব। শক্তি শেষ। তারচেয়ে বাসায় যাই, খেয়েদেয়ে রেস্ট নিয়ে বিকালে এসে গরু কিনে নিয়ে যাব। ততক্ষণে এই দরবারি উৎপাত শেষ হয়ে যাবার কথা। ফ্রেন্ড হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।বেশ ভিতরে চলে আসছিলাম, প্রায় হাটের শেষ মাথার দিকে। এখন হাটের মেইন রাস্তা ধরে ১নাম্বার হাসিল ঘরের দিকে হাঁটা দিলাম। ওখানে আমাদের বাইক রাখা। মাঝামাঝি যখন আসছি তখন পিছন থেকে চিল্লাচিল্লি দাপাদাপি শুনে তাকায় দেখি পিচ্চি হুজুরের দলের হাত থেকে এক গরু ছুটে আমাদের লাইন ধরেই দৌড়ায় আসতেসে, আর পিছন পিছন উনারা দৌড়াচ্ছেন। দেখেই আত্মা উড়ে গেল! পাশে বন্ধুর দিকে তাকাইতে গিয়ে দেখি ইতিমধ্যেই ব্যাটা শরীর ব্যাকায়ে বাউলি কেটে এক পাশে বেঁধে রাখা গরুর লাইনের সামনে যেখানে ব্যাপারীরা দাড়ায় সেই সামান্য ফাঁকের ভিতর ঢুকে গেল! আমি উপায় না পেয়ে গরু গুলির ভিতরই সরু হয়ে ঢুকে খিঁচ খায়ে দাড়ায় থাকলাম। ছোটা গরুর কাফেলা পার হয়ে যাইতেই পলাতক বন্ধু ভাইজান যেন কিছুই হয় নাই এমন চেহারা নিয়ে খুব ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে বের হয়ে আসলো। আমিও কি কম যাই, এমন একটা ভাব নিলাম যে আমি এই লাইনের গরুগুলিকে কাছ থেকে ভালো করে দেখার জন্য ওদের ভিতরে ঢুকে বসে আছি। ও সামনে আসতেই বললাম, "দেখ তো, এইগুলা খারাপ না, তোর কেমন লাগে?" এখন ও নিজে যেই ব্যাপারীদের ভিতর গিয়ে জান বাঁচাইসে তাদের মাল তাদের সামনে আবার খারাপ বলে কেমনে! সেও সমানতালে আগ্রহ দেখানোর পর দুইজন আসলেই খেয়াল করে গরুগুলি দেখলাম। বেশ সুন্দর। সব এক ধাঁচের সাদাকালো বা ছাই আর সাদা ষাঁড়। এখন যেমন সিব্বির লাইন থাকে ওইরকম কিন্তু সাইজে ছোট। অবশ্য আমাদের দুইজনেরই বাজেটের বাইরের সাইজ। এই সাইজ তখন ১১০-১২০ করে চাচ্ছে। তাও একটু দামাদামি করলাম। এগুলার মধ্যে যেটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগলো তার পাশের ২-১টার দাম করলাম। ১০৫-১১০ থেকে শুরু। ওইগুলা হালকা-পাতলা দামাদামি করতে করতে কথা চালাচালি করতে করতে আমার টার্গেট করাটা দেখায় বললাম ওই বাছুরটা কত? ওইটাতো একদম ছোট। ব্যাপারীরা অবাক হয়ে যতই বলে নাহ সেইম সাইজ, আমি মানি না। তারা শুরু করসিলো দাম ১০৫ বলে, আমি এমন এক্সপ্রেশন দিসি সাথে সাথে কমায় বলে যান আপনি এটা ৯৫ দিয়েন। আমি উদাস হয়ে গেলাম। বন্ধুর সাথে হাল্কা দার্শনিক মোডে এই হাটের সার্বিক পরিস্থিতি, ব্যাপারীদের অন্যায্য আব্দার, দাম ধরে রেখে পরে তাদের বিরাট কট খাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে করতে এখন যে আমার এদের থেকে মোটেই গরু নেয়ার ইচ্ছা নাই, পরে আসলে এখনকার থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকা কমে সেইম জিনিস পাওয়া যাবে, গাবতলির দিকে যে এগুলি পানির দরে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি বয়ানের ফোয়ারা চালু করে দিসি। একসাথে অনর্গল এতো চাপাবাজি জীবনে আর কখনো করি নাই। ব্যাপারীরাও থম মেরে গেছে। কথা খুঁজে পাচ্ছে না। আমাকে কোনমতে বললো, একটা দাম বলেন। আমি উদাস থেকেই বললাম, "এখন আর কি দাম বলবো! এখন এটা আপনাদের আমি ৫০ বললেও দিবেন না। কিন্তু আজকে রাতেই যারা আসবে তারা ৪০ বললেও ছেড়ে দিবেন।"তারা গৎবাঁধা ডায়লগ বলে নাহ এই দামে এটা কখনোই দিবে না, ফিরায় নিবে। আমি বললাম, "গরু যখন একবার হাটে এনে বাঁধসেন তখন না বেঁচে, হাসিল না তুলে আপনাদের এখান থেকে.....রাতে ভলেন্টিয়ারদের প্যাঁদানি....ইত্যাদি ইত্যাদি"। এহেম....কথাগুলা কিছুটা উহ্যই থাক। সবকিছু সবজায়গায় বলা ঠিক না। বুঝে নেন। ডোজ মাপমতো দিসিলাম। তারা আবার বলে দাম বলতে। আমি বললাম, "দেখেন সেই ভোর থেকে গরু দেখতেসি। অনেক দামাদামি করসি। আর ভালো লাগতেসে না। ফেরত যাইতেসি। এটার দাম বলতে বললে একবারে এককথায় শেষ দাম বলে দিব, এক টাকাও বাড়াবো না। ভেবে দেখেন দিবেন কিনা।" বলে কত দিবেন? আমি বললাম, "এক দাম ৫০। ন্যায্য দামই দিব। পরে এসে দাম পরে যাওয়ার সুযোগ তুলে ৪০ এ দিবি? ৪২ এ দিবি? করতে আসবো না। আমরা ভদ্রলোক। কোরবানির উদ্দেশ্যে কিনবো। আপনারাও ন্যায্য দাম পান, আমিও খুশি মনে যাই। রাজি আছেন?" তারা আমার হাত ধরে ফেললো। একধাক্কায় ৯৫ থেকে ৬৫। আমিও একধাক্কায় ৫০ থেকে ৫২। অনেক কথা চালাচালি হইলো। তারা ৫৭-৫৮ তে নামসে পরে ৫৫তে আর আমি ৫২,৫০০ এরপর ৫৩ বলে কথা শেষ করে দিসি। এক থাবড়ে গরু আমার। এরমধ্যে এই গরু হাটায় দেখার জন্য বের করসিলাম। যেমনে পাগলামি করসে, দেখে দুই বন্ধুর ইয়ে কান্ধে উঠে গেছে। তাড়াতাড়ি বাঁধা হইসে আবার। আবার এদিকে গরু কিনসি কিন্তু পকেটে নাই টাকা। তাড়াতাড়ি আব্বুকে ফোন দিয়ে বলসিলাম আসতে। সে আর আসে না আসে না। আমরা গরু ধরে দাঁড়ায় আছি। আমাদেরটা কত দিয়ে বেচছে সেটা শুনে আরো দুই কাস্টমার এই লাইন থেকে ২টা গরু নিয়ে নিসে। এদিকে আমাদের পাশ দিয়ে আমাদেরটার চেয়ে ছোট গরু মানুষ কিনে নিয়ে যায় ৬০-৬২ দিয়ে। ব্যাপারীরা উশখুশ করে। আমরা ২জন আরো বেশি উশখুশ করি। আব্বুর উপর আবার জিদ উঠে যাইতেসে। অবশ্য ব্যাপারী অভয় দিসে, গরুর দড়ি একবার যখন আমাকে দিয়ে দিসে তখন এই গরু আমারই, দাম যতই উঠুক সে আর কাউকে দিবে না। তবু চিন্তা হয়। শেষ পর্যন্ত এক কেয়ামতকাল পরে আব্বুর ফোন আসলো যে তারা হাটের মেইনগেট দিয়ে ঢুকতেসে, কই এসে দাড়াবে। গরু কই দেখতে পাবে। মনে মনে বলতেসিলাম, তোমার আর গরু দেখে কাজ নাই, ৫৩হাজার টাকার হাসিল হিসাব করে ফেলো। কিন্তু মুখে লোকেশন জানায় দিলাম। আব্বু দাড়োয়ানসহ রিক্সায় বসেই চলে আসলো ভিতরে। এসে এক নজর দেখেই বললো চলো। দাড়োয়ান চাচা, আর দুই ব্যাপারী গরু ধরলো, আমি আর বন্ধু ছিলাম পিছনে। দড়ি খোলার সাথে সাথে কি হইলো বুঝলাম না দেখলাম ১টা গরু আর ৩টা মানুষ একসাথে নাক বরাবর উড়ে যাইতেসে। আমি আর আমার ফ্রেন্ডও পিছে পিছে দৌড়াই কিন্তু আর নাগাল পাই না! কোনমতে দৌড়াইতে দৌড়াইতে হাসিল ঘর পর্যন্ত এসে গরু বাঁধলাম। হাসিল দিয়ে নতুন ২টা লাল দড়ি কিনে আগের আরো ২টা দড়ির সাথে লাগাইলাম। সাদাকালো গরুতে রশির ওই রং ফুটসিলো ভালো। হাসিল করায় টাকা বুঝে নিয়ে ব্যাপারী চলে গেছে তাই অন্য দুই রাখাল নিলাম। ওরা এক্সপার্ট ছিল। আমি যেহেতু গরুর সাথে হেঁটে যাব তাই আমার ফ্রেন্ড বিদায় নিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেছে। আমি দাড়োয়ান আর দুই রাখাল গরু নিয়ে রওনা দিসি, পিছন পিছন রিক্সায় আব্বু। মেইনরোডে কিছুদূর পর্যন্ত উড়তে উড়তে আসার পর টের পাইলাম আমার দম শেষ। ভোর থেকে এই প্রায় দুপুর পর্যন্ত টানা হেটে এখন আবার বাড্ডা টু শাহজাহানপুর দৌড়ায় দৌড়ায় যেতে পারবো না। আমি আব্বুর সাথে রিক্সায় উঠে গেলাম। (এলাকার কাছাকাছি এসে আবার পট করে রিক্সা থেকে নেমে দড়ি হাতে নিয়ে নিসিলাম অবশ্য। তবে সেইসব গুহ্যকথা উহ্য থাক।) বাসায় এনে বাঁধার পর নিজের কেনা গরু দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ! বিনয় ফিনয় ঝেড়েঝুড়ে ফেলে বলি এটা আমার অন্যতম বেস্ট পারচেজ ছিল। প্রোব্যাবলি দা বেস্ট পারচেজ এভার! এলাকার যত মানুষ দেখে গেছে সবাই দাম শুনে বিশ্বাস করতে রাজি হয় নাই। ভাবসে দাম কমায় বলতেসি। আর গরুটা পাগলা ছিল না, কিন্তু ছিল খুব তেজী। ঘোড়ার মতো হাইট আর পেটা বডি, আর সারাক্ষণ ফোঁসফোঁস করে দড়ি টানা দিয়ে এপাশ-ওপাশ পায়চারি করতো। সবচেয়ে মজা পাইসিলাম আব্বুর কাজ কারবার দেখে। প্রতিবেশী বাড়ি থেকে পরিচিত সবাই এসে গরু দেখে যাচ্ছে, প্রশংসা ট্রশংসা করতেসে আর আব্বু সিনা টানটান করে নীরবে সব প্রশংসা উপভোগ করে যাইতেসে। মুখে তৃপ্তির হাসি। কিনসে যে আসলে কে সেটা নিয়ে তেমন কোন উচ্চবাচ্য নাই। এমন হাসি পাইসে বুড়ার ওই ভাব দেখে! রাজকীয় চেহারা আর মেজাজ দেখে আমি ওই বছরই প্রথম কোন গরুকে নাম দেই। নবাব! নবাবজাদা থেকে নবাব। আমার কেনা আমার সবচেয়ে প্রিয় গরু আমার নবাব। যে পোষ মানসিলো শুধু আমার। যার গায়ে শুধু আমি হাত দিতে পারতাম। আজ পর্যন্ত যত গরু কোরবানি দিসি এবং তাতে যতটুকু দুঃখ পাইসি সেই সব কষ্টকে এক করলেও নবাবকে কোরবানি দেয়ার সময় আমি যে কষ্ট পাইসি তার অর্ধেকও হবে না। তার কোরবানি নিয়ে আলাদা গল্প আছে। তবে সে নাহয় আরেকদিন বলা যাবে। আজকে শুধু নবাবের সুখস্মৃতিটুকুই থাক। 🙂 মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেই আফতাব থেকে গরু কেনা না হয়ে শাহজাহানপুর থেকে গরু কেনা হইসিলো বলে আমি বাবার সাথে রাগারাগি করি, এই ২০১৩তেই আমি শেষবারের মতো সেই প্রিয় আফতাবনগর থেকে গরু কিনি। ২০১৪তে আফতাবের বাজার ভালো ছিলো না। বাধ্য হয়ে শাহজাহানপুর থেকে গরু কিনি। ২০১৫ তে আমার বাবা হজ্ব করতে গিয়ে মারা যান। যাবার আগে কাছাকাছি থেকেই আমাকে একটা ছোটখাটো গরু কিনে কোরবানি দিতে বলে যান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কিভাবে কিভাবে যেন এই শাহজাহানপুর থেকেই আমার গরু কেনা হচ্ছে। চাইলেও শেষ পর্যন্ত অন্য কোথাও থেকে কেনা হচ্ছে না। অবশ্য ব্যাপারটা কাকতালীয় মাত্র। অন্যকিছু না।
১০০০% সত্যি কথা! মোস্ট অফ দ্য টাইম মানুষ যাদেরকে "পাগলা" গরু বলে আমি দেখসি তার ৭৫% গরুই আসলে ঘরে/খামারে বেঁধে পালা, শান্ত পরিবেশে ২-৩জন মানুষ আর ২-৪টা গরুর মাঝখানে থেকে বড় হওয়া গরু। এরা মোটেও পাগল না, এরা প্যানিকড! এরা হুট করে এই পাগলা শহরে এসে আমাদের মাঝে পরে আমাদের আতংকে অস্থির হয়ে নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য আমাদের থেকে সরতে চায়, নীরব কর্নারে/অন্ধকারে বা মাঠ টাঠের দিকে ভেগে যেতে চায়। এরা অপরিচিত মানুষের হাত থেকে পালানোর জন্য দৌড়ায়। জাস্ট ইমাজিন, আপনাকে আমাকে ধাম করে শত শত গরুর খোলা এক পালের মাঝে ফেলে দিলে আর কয়েকটা গরুকে আমাদের দিকে আগায় আসতে দেখলে আমাদের ফার্স্ট রিয়েকশন কি হবে? অবশ্যই আমরা দৌড়ায় ওই পালের মাঝ থেকে সরে আমাদের হিসাবে নিরাপদ কোনো জায়গায় চলে এসে বাঁচার চেষ্টা করবো। বেচারা গরুগুলাও তো তাই করে! এটাই স্বাভাবিক। এটাকে পাগলামি বললে সুস্থতা কি! আমার ২০১৮ এর গরুটা কেনার পর থেকে বাসায় আনার পর পর্যন্ত পাগলামির চূড়ান্ত করে ছাড়সে। আমাদের গরুর টেক কেয়ার সাধারণত আমাদের বাড়ির দারোয়ান চাচা করেন। উনি জামালপুরের মানুষ। গরু পেলে অভ্যস্ত। পালতে ভালোবাসেন। উনিও ভয় পেয়ে গেছেন। কোনোভাবেই শান্ত হইতেসিলো না ব্যাটা। চোখ লাল, চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছে আর সমানে ফোঁসফোঁস করতেসিলো। ৩টা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা থাকার পরও মনে হইতেসিলো যেকোনো সময় ছুটে যাবে। নাকে নাকা ছিল। তবু কেউ কাছে ভিড়তে পারতেসে না। এমনকি খাবার-পানিও দেয়া যাইতেসিলো না। আমি চাচাকে গোসল করায়ে খাবার পানি দিতে বলি। চাচ্ছিলাম একটু সময় দিতে, পরিচিত হলে, রিল্যাক্সড হলে কিছুটা ঠান্ডা হবে। হইলো না। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রহমতে আমার একটা জিনিস চোখে লাগে। আমি চাচাকে বলি আমি দড়ি টাইট করে ধরতেসি আপনি গরুর নাকা কেটে দেন। চাচা অবাক। কোনমতেই রাজি না। এম্নেই এই ত্যাদর গরু ধরা যায় না তার উপর নাকা কাটা মাত্রই সিচুয়েশন কন্ট্রোলের বাইরে যাবে গিয়ে। আমার কি...আমি তো রাতে বাসায় চলে আসবো, গরু সারারাত পালতে হবে একা চাচার, তখন সে কি করবে!তারপর আমি যখন জোর দিয়ে বলসি হয় আমি গরু ধরি আপনি নাকা কাটেন নাইলে আমি কাটি আপনি ধরেন...পরে কি হবে ভেবে ভয় পায়েন না, নাকা এখন কাটবই। তখন সে বিশ্বাস রেখে নাকা কেটে দিসে। নাকার কাছে হাত নেয়া মাত্রই আমি আর চাচা অবশ্য প্রায় উড়ে যাইতেসিলাম। কোনোমতে ধস্তাধস্তি করে কেটে দিয়ে নাক থেকে পুরা দড়ি বের করে নিয়ে আসছি। হাল্কা একটু ব্লাড বের হইসে। এরপর গরুটাকে পানি টানি খাওয়ানো হইসে। আসলে ব্যাপারটা ছিল এরকম যে ঘরে পালা গরু ঢাকায় এসে মনে হয় ছটফট করসিলো, ব্যাপারি দিসে নাকার দড়ি কষে টাইট করে। এতই টাইট হইসে যে গরুটা কন্সট্যান্ট এগোনির মধ্যে ছিলো। অবলা প্রাণী কাউকে পেইনের কথা বলতে পারে না, ছটফট করসে আর এজন্য আরও মার খাচ্ছে। টান লাগে দেখে খাবার-পানি কিচ্ছু খেতে পারতেসে না। সেই দড়িটা কেটে বের করে দিতেই যেই কৃতজ্ঞতার চোখে আমাদের দিকে তাকায় ছিলো ওইটা ভাষায় ফুটায় তোলা যায় না। এরপর বুভুক্ষের মতো পানি খাইলো। আমি কলা খাওয়াইলাম। আদর করলাম। তবু ভয় পাচ্ছিলো। পাওয়াটাই স্বাভাবিক। নতুন জায়গা তো। ওই রাতে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির হাত থেকে বাচাইতে আমরা আবার মাঝরাতে বৃষ্টিতে নেমে ওরে খুলে ভিতরে এনে বাঁধি। পরপর ২বার ওকে এভাবে সেইভ করায় ও আমাদের পুরাপুরি ট্রাস্ট করে একেবারে শান্ত হয়ে যায়। কি লেভেলের আদুরে একটা গরু ছিলো এটা কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না। সামনে দাড়ালেই গা ঘেঁষে দাড়ায় যাইতো, এরমানে এখন তাকে হাতায় দিতে হবে। যতক্ষণ হাতাবেন সে নড়বেও না। আর আপনি যদি ওর সামনে বসে ওর গায়ে হাত দেন তো শুয়ে পরবে, মাথা আপনার কোলে তুলে দিবে। চার পা টানটান করে লেটকায় পড়ে থাকবে।বাসার সব বাচ্চার প্রিয় গরু ছিলো ওটা। অবিকল আরেকটা বাচ্চা ছিলো যে। এই সেইম গরুই যে প্রথম দিকে পুরা কারবালা করে ফেলসিলো তা কে বিশ্বাস করবে। ব্যাপারির ওই ছোট্ট একটা ভুল যদি আমরা ধরতে না পারতাম, এই আদুরে বাচ্চা গরুটা তার জীবনের শেষ কয়টা দিন তীব্র ব্যথা নিয়ে বিনা খাবারে ভুগে মরতো। পাগলামি করতো। জবাই দিয়ে আমরা বলতাম, যাক বাবা একটা পাগলা গেছে, বাঁচা গেছে। ওর পেইনটা বুঝতাম না। ওদেরকে বুঝতে হবে। নিজেদের ওদের জায়গায় রেখে ওদের বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর তৈরী সকল মাখলুকাতের মধ্যে ওরাও একটা মাখলুকাত, আর আমরাও একটা মাখলুকাত মাত্র। আমরা ওদের তুলনায় নিজেদের শুধুমাত্র তখনই যোগ্যতর ভাবতে পারি, যখন আমরা ওদের তুলনায় নিজেদের ব্রেইন আর মানবিক গুণগুলি বেটার ভাবে চর্চা করতে পারবো। নাহলে আমরা ওদেরই সমান, হয়তো ওদের অধমও হয়ে থাকতে পারি। চারপাশে তাকায় দেখেন, কি মনে হয়... ১৮,০০০ মাখলুকাতের মাঝে সবসময়ে সত্যিই কি আমরাই শ্রেষ্ঠ মাখলুকাত?!
এইটা আমার নিজের কুরবানির গরু নিয়ে ঘটে জাওয়া ঘটনা ২০১২ সাল, ঐবার হজ্ব এর দিন মানে চাঁদ রাতের আগের দিন গিয়েছিলাম গরু কিনতে। সকাল ১০টায় আমি বাবা আর ছোট ভাই আফতাব নগর হাটে যাই। দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুরে ও গরু কেনা হয়নি। তারপর আমি বেইলী ব্রিজ এর ঐখানে চলে যাই, বাবা আর ছোট ভাই সামনের দিকে থাকে। ব্রিজ এর আগে হাতের বামের ডোগা গুলায় ধুকে যাই আমি, নিচের গরুটা দেখেই পছন্দ হয়ে যায়। সাথে সাথে বাবাকে ফোন করে আসতে বলি আর আমি দামাদামি করতে থাকি। বেপারির চাওয়া দাম ছিলো ১২০, আমি ৭৫ বলে দাঁড়িয়ে আছি পরে বাবা এসে আর ২হাজার বাড়ায়। অনেক্ষন দামাদামির পর ৭৯তে বেপারি গরু দিয়ে দেয়। গরুটা শান্ত ই ছিলো তাই কোন রাখাল নেই নি ঐবার, কিন্তু আবার সেই পুরনো ঘটনার পূনরাবৃত্তি যেইনা গরু নিয়ে মেইন রোড এ উঠেছি গরুর পাগলামি শুরু। গরু সামলাতে সামলাতে কখন যে আমার বা হাত গরুর গলার দড়ির ভিতর ঢুকে গেছে টের ও পাই নি, বা হাতের কনুই খুব বাজে ভাবে আটকে গেছিলো গলার দড়ির সাথে যা ছুটাতে পারিনি। গরু আমাকে গলায় ঝুলিয়ে এক দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে মধ্য বাড্ডা ওভার ব্রিজ পর্যন্ত চলে আসছিলো। আমি মেরুল পর্যন্ত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম এইটুকু মনে ছিলো,মাথায় শিঙ্ এর আঘাত লাগায় অগ্যান হয়ে গিয়ে ছিলাম, পরে যখন চোখ খুলি হসপিটাল এর বেড এ নিজেকে আবিষ্কার করি। বা হাত এর জয়েন্ট কাঁধ থেকে সরে গিয়ে ছিলো, বা পা এখনো মাঝে মাঝে ব্যাথা করে, আর মাথায় খুব বাজে ভাবে সিং টা লাগসিলো তাই অগ্যান হয়ে গিয়ে ছিলাম। এটাই ছিলো আমার জীবনের কুরবানির সব চাইতে ভয়ানক ঘটনা। ঐবার গরুটা কুরবানি হয়ে ছিলো ঈদ এর ৩য় দিন। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে ছিলাম এইটা দেখে গরুটা বাসায় আনার পর নাকি একটু ও পাগলামি তো দূরে থাক কারো দিকে তেড়ে ও আসে নি, আর কুরবানির সময় যখন আমি সমনে গিয়েছিলাম, আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলো আর সহ্য করতে পারি নাই। রুম এ চলে গিয়ে ছিলাম। বাবার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম গরুটাকে বাসায় আনা হয়েছিলো কি ভাবে? বাবা বলে গরুটা আমাকে নিয়ে মধ্য বাড্ডা পর্যন্ত চলে এসেছিলো রাস্তায় কেউ গরুটাকে আটকানোর চেষ্টা ও করে নি। মধ্যবাড্ডা ওভার ব্রিজ এর নিচে কয়েকজন ট্রাফিক আর সার্জেন্ট মিলে গরুটাকে থামিয়ে আমাকে ছাড়ায়। পরে বাবা ছোট মামাকে ফোন করে সব বলে গরু রাস্তায় বেধে রেখে আমাকে নিয়ে হসপিটাল এ চলে গিয়ে ছিলো, আর মামা গরু বাসায় নিয়ে এসেছিলো। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম ঐসময়। সবাই কে বলবো এই সব অবলা প্রানি গুলা গ্রামের পরিবেশে লালিতো পালিতো হয়, শহর কেমন তা ওরা জানেনা। তাই হাট থেকে গরু বাসায় নেয়ার সময় সর্বচ্চো সাবধানতা অবলম্বন করবেন, ধন্যবাদ
আবার একটা লম্বা গল্প লিখে ফেললাম।যদিও Golam Destegir ভাইয়ের বলদপ্রীতি দেখে আমার আমাদের এই পারিবারিক কাহিনীর কথা মনে পড়ে গেছে, গল্পটা কিন্তু উনার আবেগের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুকেন্দ্রিক! যাই হোক, কাহিনীটা নিচে বলছি... আমি এই এতো বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে কোনো বলদ গরু কিনতে দেখি নাই। আমার বা আমার বাবার তো কেনা হয়-ই নাই, আমার চাচাফুপিদের বা আমাদের কোনো ভাড়াটিয়াদেরও কখনো কিনতে দেখি নাই। চাচা আর ভাড়াটিয়াদের কাউকে কাউকে ২-১বার বকনা কিনতে দেখসি, তবে তাও খুব রেয়ার, লিটারেলি ২-১বার-ই। তবে এই বাড়িতেই বলদ কিনে আনা নিয়ে একটা মজার স্টোরি আছে। গল্পটা শোনা গল্প, আমার খুব নিকট একজন আত্মীয়ের মুখে। উনার আবার টুকটাক বানায় বানায় গল্প বলার অভ্যাস আছে তাই এই গল্পের কতটুকু সত্য কতটুকু উনার কল্পনা জানি না। তবে উনি আমাকে এই গল্পটা বলেন কারণ এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন আমার আব্বাজান। আমার বাপচাচারা ৯ ভাইবোন। আমার বাবাসহ দাদার ছয়জন ছেলে ছিলেন। তবে দাদার গরু সবসময় কিনে আনার দায়িত্ব ছিলো তার বড়ছেলে আমার বাবার উপর। শুধু বড় দেখেই না, আব্বু গরু ভালো কিনতে পারতেন এটা একটা বড় কারণ ছিল। আর আমার গরুপাগলামি যে আমি উত্তরাধিকার সূত্রে উনার কাছ থেকেই পাইসি তাতেও কোনো সন্দেহ নাই। এখন মূল ঘটনায় আসি, স্বাধীনতার ২-১ বছর আগে-পরের কোনো এক কোরবানির ঈদের ঘটনা। আব্বু তখন গরু নিয়ে আসতো হয় গাবতলি থেকে নয় একবারে আমাদের দেশের বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে। সেখান থেকেই হাটতে হাটতে এই বাড়িতে গরু নিয়ে আসতেন। সাথে এসিস্ট্যান্ট কাম রাখাল হিসাবে থাকতেন দাদার ব্যবসার একজন খুবই বিশ্বস্ত কর্মচারী মকবুল চাচা এবং মাঝেসাঝে আমার মেজো চাচা। সেবার আমার মেজোচাচাও বায়না করে আব্বু আর মকবুল চাচার সাথে গেছিলেন গরু কিনতে।তো, সেই বছর দেশের পরিস্থিতি বেশ ভাংগা-গড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো। কোরবানি দেবার মতো মানুষের পরিমাণও ছিল কম। গরুর বাজার শুরু থেকেই ছিলো মন্দা। আব্বুরা সেবার গেছিলো গাবতলি হাটে। হাটে গিয়ে তারা দামদর করতে করতে হঠাৎ একটা বিশাল বলদ পেয়ে যায় অবিশ্বাস্য কম দামে। সাদা রংগের ইন্ডিয়ান বলদ। যার কাছে শুনসি তার ভাষ্যমতে, ওটা ছিল হাটের সবচেয়ে বড় গরু। আমার বাপচাচা ২জন সস্তায় পেয়ে মহানন্দে সেই বলদ কিনে নেন মাত্র আড়াইশো টাকায়!!(ভাই ওই আমলের আড়াইশো মানে এই আমলে কতো আমি জানি না। আমার কথা শুনে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি কইরেন না, আমি নিজে গল্পটা শুনসি আরেকজনের কাছে। ছোটবেলায় যখন এই গল্প শুনসিলাম তখন আমিও ধরে নিসি গল্প বলতে গিয়ে উনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আড়াই হাজারকে ভুলে আড়াইশো বলে ফেলছে।) এদিকে গরু কিনে ৩ কীর্তিমান তো খুশিতে বাগবাগ। হাটের সবচেয়ে বড় গরু কিনে ফেলসে এবার তারা। উঠতি বয়স, সদ্য তরুণ। এই আজদাহা সাইজের গরু নিয়ে এসে এলাকায় ঢুকলে কি একটা আলোড়ন উঠবে, তার উপর দাদা কত্তো খুশি হবেন ভেবে ৩জনই আপ্লুত। খুশিতে তাক ডুমাডুম করতে করতে বলদ নিয়ে ৩জন বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত। সেই ভোরে গাবতলি গিয়ে গরু কিনে হাটতে হাটতে বাড়িতে আসতে আসতে ততক্ষণে অবশ্য অনেক রাত। ওই আমলের হিসেবে প্রায় মাঝরাত। তাও, তাদের হাল্লাচিল্লা করে আসার শব্দ শুনে এলাকার লোকজন মানে প্রতিবেশীরাও বের হয়ে আসছে। মীর সাহেবের গরু আসছে! গরু নিয়ে বাড়ির গেট পর্যন্ত এসে উনারা দেখে দাদা দোতালার টানা বারান্দায় সটান সোজা হয়ে দাড়ায় আছেন। রাগে গনগন করতেসেন! উপর থেকে হুংকার দিয়ে বললেন, "এটা কি এনেছিস?" আমার দাদা মানুষ হিসাবে খুবই ভালো বলে বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু উনার মেজাজ ছিল কিংবদন্তী লেভেলের। এককালে কোলকাতায় জেলের জেইলর ছিলেন, পরে ব্যবসায় মনোযোগ দিয়ে ঢাকায় সেটেল করেন। লিটারেলি "আংরেজ কি জামানে কি জেইলর" টাইপের মেজাজ ছিল উনার। সেই উনাকে ওইরকম বিভীষণ মূর্তিতে দাড়ায় থাকতে দেখে আব্বু আর চাচ্চুর জানপাখি নগদে উড়ে গেল। দাদার হুংকার শুনে আব্বু বা চাচ্চুর কোনো একজন কোনমতে বলসেন, "আব্বা এবার খুব সস্তায় এই গরুটা কিনেছি। হাটের সবচেয়ে বড় গরু। দরজাটা একটু খুলে দিতে বলেন...."জবাবে দাদা নাকি বলসিলেন, "তোরা দুই বলদ এক্ষুনি এই বলদ নিয়ে দূর হয়ে যা। যেখান থেকে পারিস আমার কোরবানির ষাঁড় কিনে আনবি, এছাড়া এই বাড়িতে ঢুকবি না।" কথা ওখানেই শেষ। ওভার এন্ড আউট! আব্বুরা হাড়ে হাড়ে জানতেন দাদা কি জিনিস। তারা ওই রাত্রেই তখনই গেটের বাইরে থেকেই আবারও ওই গরু নিয়ে গাবতলিতে ফেরত যান। দুই ভাই মিলে সারারাত দাড়ায় থেকে সেই বলদ গরু বেচেন। তারপর সেই টাকায় দাদার কোরবানির ষাঁড় কিনে পরদিন ফেরত আসেন। এইবার বাড়িতে ঢুকার অনুমতি মিলে। সেই শেষ! আমার মনে হয় না এরপর আর কোনদিন আমার বাপ বা কোন চাচা আবার বলদ কেনার কথা কল্পনাও করসেন। অন্তত আমি আজ পর্যন্ত তাদের কিনতে দেখি নাই। 😐
আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার ২০১৭ সালের গরু কিনার গল্প। আমরা সাধারণতো হজ্জ্ব এর দিন গরু কিনি,তো ওই বার যথারীতি আমি আমার ছোট ভাই সাথে মামাতো ভাইরা,সাথে এক মামা…
২০১১ঃ চ্যাপ্টার-১ ২০১১ সালে আমার জোশ ছিল তুংগে! মূলত ওই সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী আরও ২-৩ বছর অনলাইন-অফলাইনে কোরবানির ঈদের গরু নিয়ে বিপুল উদ্যমে মাতামাতি করে গেছি। বিসমিল্লাহতে জোশ বেশী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমারও ছিল। জোশ বেশী থাকলে আবার হুশ জিনিসটা কিছুটা কম্প্রোমাইজড হয়, এটাও চিরন্তন সত্য। আমারও হইসে। ওই বছর খাওয়া-ঘুম-শাওয়ারের জন্য ম্যাক্সিমাম ৬ঘন্টা বরাদ্দ রেখে আমি বলতে গেলে বাকি ১৮ ঘন্টাই হাটে বা পিসির সামনে। সারাদিন টইটই করে হাটের আপডেট দিচ্ছি নিচ্ছি। ভার্সিটি খোলা, ভার্সিটির জন্য বের হচ্ছি - কিন্তু যাচ্ছি কোথায় তা একমাত্র আমি জানি আর আল্লাহ জানে। এমনকি যেদিন সন্ধ্যায় হাট খালি হয়ে গেল, সেদিনও আমি সারাদিন হাটে। অথচ আমি গাধা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারি নাই আগামী মাত্র কয়েকটা ঘন্টার মধ্যে কি আজাব আসতে যাচ্ছে। একেবারে বুঝতে পারি নাই এটাও অবশ্য সত্য না। কিছুটা আঁচ পাচ্ছিলাম। কিন্তু লেভেলটা বুঝতে পারি নাই। যার কারণে ওই আঁচে পুড়তে হয় আমাকেও। খুলেই বলি... আমাদের বাসায় সবাই সাধারণত চাঁদ রাতের আগেরদিন গরু কিনে থাকেন। আব্বুও কিনতো। কিন্তু যেদিন থেকে গরু কেনাকাটার ব্যাপারটা মূলত আমার হাতে চলে আসে ওইদিন থেকে আমি অন্তত দুই দিন আগে কিনে ফেলার একটা অলিখিত নিয়ম চালু করে ফেলি। বাড়িতে আমাদের গরুই সবার আগে কেনা হয়ে যেত। অনেকে আমাদের কেনা গরু দেখে বাজারের ভাও বুঝার চেষ্টা করে তারপর প্রস্তুতি নিয়ে যেতেন হাটে। কিন্তু ওইবছর আমি সারা দিনরাত হাটে থেকে অসংখ্য গরু সেমি-সিরিয়াস ভাবে দামাদামি করেও কোনো কনক্লুশনে আসতে পারছিলাম না। দাম বাড়তি লাগছিল। কিনে ফেলার পর্যায়ে যেতে পারছিলাম না। দাম বাড়তি লাগলেও অবশ্য খুব বেশী বাড়তি ছিল না, একটু বাড়তি ছিল, আর ব্যাপারীদের মধ্যে ওই প্রথম একটা অন্যরকম একগুঁয়ে ভাবের শুরু দেখি। তারা বাড়তি দামেই গরু ছাড়বে, নিলে নেন না নিলে আগে বাড়েন। এইবার নাকি পাবলিক কাঁদবে। এসব ত্যাড়ামি হেসেই উড়ায় দিতাম, উল্টা নিজে কাস্টমারসমাজের পক্ষ থেকে ২-১টা ত্যাড়া বয়ান ঝেড়ে দিয়ে আসছি। হাটে সচরাচর যা হয় আর কি। ওইবারই আব্বু কেন জানি আমাকে বারবার গরু কিনে ফেলছি না কেন এখনো এটা নিয়ে জিজ্ঞাস করছিল। আমিতো হাটে প্রচুর গরু দেখতে পাচ্ছিলাম। এটাও দেখছিলাম যে বিকিকিনি খুব একটা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত গরু যখন আছে, দাম তো নিশ্চয়ই কমবে। আর এটা ভাবাই ছিল আমার প্রথম গাধামি।দাম বাড়তি আছে দেখেই যে বিকিকিনি এখনো চালু হচ্ছে না, যখন মানুষ ধৈর্য হারায়ে দুই পয়সা বাড়তি দামেই কেনা শুরু করবে তখন দাম আরো বাড়বে + হাটও খালি হতে শুরু করবে এটা মাথায় আসেনি। জোশে হুশ খোয়ানোর প্রথম লক্ষণ ছিল এটা। এরথেকেও বড় একটা ভুল আমি করে বসি। অহংকার আর শোঅফের লোভ। ব্যাখ্যা করি। গরু আমি মোটামুটি ভালোই কিনতে পারতাম আগে। দেখা যায়, আমাদের কেনা গরুর মাপ প্রায় ফিতা দিয়ে মেপে নিয়ে বাড়ির অনেকে সেইম বাজেট নিয়ে হাটে গিয়ে ওর চেয়ে ছোট গরু কিনে নিয়ে আসত। এই কম্পিটিশন দেখে হাসতামও, মেজাজও খারাপ হতো - আবার ভিতরে ভিতরে অহংকারও জমে যাচ্ছিল। এটা হলো অফলাইনের ব্যাপারটা।আর অন্যদিকে তখন অনলাইনেও ব্যাপক একটিভ। আমার কেনা গরু অনেকে দেখবে, নিশ্চয়ই জাজ করবে, এখন এই "দেখানোর" গরু কিনায় "জিতে" না আসলে বাহাদুরি থাকে না। এই সমস্ত ফাত্রা চিন্তা ভাবনা ছিল দ্বিতীয় গাধামি। ভুলে গেছিলাম গরু কোরবানি আল্লাহর জন্য, মানুষের জন্য না। আল্লাহ ওই ভুল থেকে শিক্ষা দিয়েছেন। বয়সের সাথে সাথে এখন কিছুটা ম্যাচিউরিটি আসছে। এখন যেভাবে খুশি যত খুশি "ঠকবো", কিন্তু ওইসব ভাবার ভুল আর হবে না ইন শা আল্লাহ্। আমার কোরবানি, আমার মর্জি। আসলে আমরা ভুলে যাই যে আমরা যাই কোরবানি দেয়ার একটা পশু কিনে আনতে। এটা কোনো স্পোর্টস না, কোন ব্যবসায়িক ডিলও না যে জিতা-হারার প্রশ্ন থাকবে। হ্যা, সাইজ অনুযায়ী অবশ্যই একটা রিজনেবল দাম থাকবে। তবে সেটা একেবারে পাল্লায় মেপে কাঁটায় কাঁটায় হতে হবে, পারলে দুই-চার হাজার কম খরচ করে মাল খালাস করে আনতে হবে এই তাড়নাটা আখেরে সুখের থেকে কষ্ট দেয় বেশী। যাই হোক, তখন যখন এই ভুলের মধ্যে ডুবে ছিলাম তখন তো আর গরু কিনতে পারি না। খালি ভাবি দামটা আরেকটু নাগালের মধ্যে আসলেই কোপ মেরে দিব। সেই সুযোগ আর আসে না। এদিকে আমি যেমন অনলাইনে আপডেট দিয়ে যাচ্ছি, তেমন অনলাইন থেকে আপডেট পাচ্ছিলামও। একটা ফিশি ব্যাপার তখন খেয়াল করলাম। আমার ঘোরা চারটা অস্থায়ী হাটসহ ঢাকার প্রায় সব অস্থায়ী হাটে ইতিমধ্যে প্রচুর গরু থাকলেও স্থায়ী হাট গাবতলী তখনও পুরা ভরে নাই। ঈদের ৩-৪দিন আগে থেকে গাবতলীতে যে পরিমাণ গরু থাকার কথা, আছে বলতে গেলে তার অর্ধেক। গাবতলী একা ঈদে কতটা চাহিদা মেটাতে পারে, হাট হিসাবে কত বড় সেসব ভিন্ন প্রসঙ্গ, কিন্তু গাবতলীর আসল ফাংশন হচ্ছে এটা একটা হাব(hub)। একটা নেটওয়ার্কের সবচেয়ে ইফেকটিভ সেন্টার। ওই সময়ে ঢাকার গরুর বাজার কেমন যাবে তা ডিপেন্ড করছিল গাবতলী নামের আড়তের পেটে মজুদ কতটা আছে তার উপর। কিন্তু আমি খবর পাচ্ছি মজুদ যতটা থাকা উচিৎ ততটা নাই। এটা একটা অনেক বড় অশনিসংকেত। আমি এই সংকেত দেখেও ওভারলুক করে যাই। এটা আমার তৃতীয় গাধামি। তবে আমি নিজে বোকার মতো কাজ করলেও আমার কাছে ওইসময় যেই সাজেশন চাচ্ছিল, আমি বলছিলাম কিনে ফেলতে। ২টা কারণে বলছিলাম, ১. গাবতলী ফাঁকা ফাঁকা। ২. ঢাকার সবাই একসাথে টান দিলে নগদে হাট ফাঁকা হয়ে যাবে।এতকিছু বুঝেও আমি এই সেল্ফ-কন্ট্রাডিক্টরি ভুল নিজে কেন করছিলাম - এর উত্তর আমার নিজের কাছে নাই! চতুর্থ আর সর্বশেষ যেই গাধামিটা আমি সহ আমরা সবাই ওই বছর করি সেটা হচ্ছে, হাইওয়েতে হাজার হাজার গরুর ট্রাক আটকে আছে, জ্যাম ছুটলে এইসব ট্রাক যেকোনো মুহুর্তে হাটে ঢুকবে এবং হাটে গরু উপচে পড়বে, দাম পড়ে যাবে এই রিউমারে অতিরিক্ত আশ্বাস রাখা। বাসায় আব্বু-আম্মু যদিও বলছিল, কোরবানির গরুর দাম/সাইজ যাইহোক আল্লাহ কপালে যা রাখসেন একটা নিয়ে আসলেই তো হয়। এতো ভাবার কি আছে। কিন্তু আমি এই সকালে না বিকালে কিনব, বিকালে না রাতে কিনব, রাতে না ভোরে কিনব করে যাচ্ছি। এভাবে দুইদিন আগে তো কেনা হলোই না চাঁদরাতের আগেরদিনও সারাদিন কেটে গেল, আমি হাটে হাটে ঘুরলাম - গরু কিনলাম না। সারারাত না ঘুমায়ে ফজরেরও আগে থেকে টানা বিকাল পর্যন্ত হাট ঘুরে বাসায় এসে অনলাইনে ছবি আপলোড করে ঘুমায় গেলাম। নিয়ত ছিল রাতে কিনব। বাজার দেখে আমার মনে হচ্ছিল এখন গরু ছাড়ছে, রাতে দাম স্বাভাবিক হবে - ওটাই হবে কোপ মারার টাইম। গাধাটা কত কিউট রে! মনে আছে, ঘুমাতে গেছি ৬টা-৬ঃ৩০টার দিকে আর সাড়ে ৭টার দিকে আমার বোন(তখনও দেশে ছিল) আমাকে ফোন দিতে দিতে উঠায় দিল। খুব মেজাজ খারাপ করে ফোন ধরে ঝাড়ি মারতে যাব, তার আগেই শুনি সে হড়বড় করে বলছে আমি নাকি এখনো গরু কিনি নাই দেখে আব্বু-আম্মু খুব টেনশনে আছে। ওর শ্বশুরবাড়ির গরু কিনতে ওর দেবরও হাটে হাটে ঘুরছে কিন্তু গরু কিনতে পারছে না।(উল্লেখ্য, আমার ছোট দুলাভাই আর ওর ছোটভাই দুইজনই ব্যাপক মাত্রায় গরু পাগল। ওরা আমার চেয়েও হাটে বেশি ঘুরতো।) হাটে নাকি গরু নাই! এসব শুনে আব্বু-আম্মুর টেনশন আরো বেড়ে গেছে, আর আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি! আমি যেন এখনই বের হয়ে হাটে যাই। অবস্থা নাকি খুব খারাপ। আমার এসব শুনে খুব বেশী হেলদোল হইলো না। ও কি জানে? আমি নিজে বিকাল ৪টা-৪ঃ৩০টা পর্যন্ত হাট ভরা গরু দেখে আসছি। বেচাকেনাও তেমন ছিল না। এখন এই ৩ঘন্টার মধ্যে ঢাকা শহরের এতগুলা হাট খালি হয়ে যাবে! এত গরু যাবে কই! মেয়েমানুষের কাজই হুদাই প্যানিক করা আর সবকিছু বাড়ায় বাড়ায় বলে হইচই করা! তারপরও সবার টেনশনের কথা শুনে নড়তে নড়তে উঠলাম। হাতমুখ ধুয়ে খালি পেটেই চা খেলাম। শরীর ক্লান্তিতে আর ঘুমে ভেংগে আসছিল। সেইসাথে প্রচন্ড মাথাব্যথা। কাঁচাঘুম ভাংগায় আরো খারাপ লাগছে। বডি আর লোড নিতে পারছিল না। কিন্তু আব্বুকে দেখলাম খুব টেনশনে আছে। বললাম চিন্তা কইরো না। যদি অবস্থা খারাপ দেখি বেশী বাছবিচার করব না। যেটা পরতায় পড়বে নিয়ে আসব। তুমি টাকা রেডি রাখো। বের হলাম বাসা থেকে। আফতাব যাব ভেবে রিক্সায় উঠে ফোন দিলাম আমার ২-৩জন ভাইব্রাদারের কাছে। খবর শুনে আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেল। সেন্স ফিরতে শুরু করল। ততক্ষণে আমার ইয়ে মারা সারা। মানুষকে আমি যেই সাজেশন দিয়ে বেড়াচ্ছি তা আমি নিজে ফলো না করার খেসারত দেয়ার টাইম হয়ে গেছে। আফতাব খালি, কমলাপুরে আগুন! রিক্সাওয়ালাকে বললাম তাড়াতাড়ি বাড়ির কাছের শাহজাহানপুর হাটে নিতে। চ্যাপ্টার - ২ শাহজাহানপুর হাটে ঢুকার মুখেই দেখি শতশত মানুষের ঢল, ফাঁকফুক দিয়ে হার্ডলি ২-১টা গরু দেখা যাচ্ছে। আমি ভিতরে যাওয়ার একটা শর্টকাট রাস্তা দিয়ে মেইন হাটের উল্টা দিকের ছোট মাঠটার মধ্যে চলে আসলাম। গরু প্রায় শেষ-ই বলা চলে। যা আছে তা দিয়ে তিন কাতার পুরা হবে না। সব বাজেটের অনেক বাইরের বড় বড় গরুগুলা আছে। আর অল্প কিছু আছে আমাদের মধ্যবিত্তের গরু, সেগুলার একেকটার পিছে ১৫জন করে চিপকে গেছে। একজনের হাত থেকে দামে ছুটলে পিছের ১৪ জন লুফে নেয়ার জন্য স্ট্যান্ডবাই রেডি।অবস্থা বুঝে সাথে সাথে আব্বুকে ফোন দিয়ে বলে দিলাম তাড়াতাড়ি টাকা নিয়ে চলে আসতে। গরু বায়না করে টাকার জন্য ওয়েট করার মতো অবস্থা নাই। এই হাট থেকে গরু পাব সেই ভরসাও পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো কয়েক হাট ঘুরতে হবে। আব্বু যেন দ্রুত দাড়োয়ানকে সাথে নিয়ে চলে আসে। আব্বু জানালো আরেক দুঃসংবাদ। আমার আরেক চাচা আর ফুপি দুইজনের ২টা গরু সহ আর কার কার গরু কেনাও যেন বাকি। আমরা এখনো কিনি নাই দেখে তারাও রিল্যাক্সড হয়ে বসে ছিল। এখন সব একবারে আসতেছে, অনেকগুলা গরু লাগবে! পরে অবশ্য শুধু এক চাচা তার দুই ছেলেকে নিয়ে আর ফুপির গরু কেনার জন্য অন্য আরেক চাচা ড্রাইভার নিয়ে আব্বুর সাথে আসছে শুধু। বাকিরা অন্য বড় হাটে চলে গেছে। এখন গরু লাগবে ৩টা। ৩টা একই সাইজ। ৪০-৪৫ এর মধ্যে। তবে ফুপির জন্য কোন ফিক্সড বাজেট নাই, চাইলে প্রয়োজন মতো যত খুশি বাড়ানো যাবে। ২০১১ এর আগ পর্যন্ত এই দামে ভালোই গরু পাওয়া যেত। কিন্তু ওই মুহূর্তে তো আর পাই না। আমরা চাচ্ছিলাম সবার আগে ফুপির গরুটা কিনে দিতে, উনি আমাদের সবার মুরুব্বি(মানে আমি না, সিনিয়ররা চাচ্ছিল আর কি। আমি আছি নিজের টেনশনে!) কিন্তু ফুপির গরু কিনে নিয়ে যেতে যেই চাচা আসছেন উনি আবার বিরাট ইয়েপাকনা। আমি ততক্ষণে পুরা হাট ঘুরে কয়েকটা আমাদের নেয়ার মতো গরু ছেঁকে বের করে ফেলেছি। প্রথম গরুটা নেয়ার জন্য দাম জিজ্ঞাস করতেই দাম চাইল ১লাখের মতো। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। এমনিতে ওটা ৬৫+/- এর গরু। বুঝা গেল ওটা ৭০-৮০তে ছেড়ে দিবে। তখন এই দাম খারাপ না। আমরা সবাই গরু কিনতে আসা চাচার দিকে তাকাইলাম। উনি ৩ হাত দূরে দাঁড়ায় খুব ভাবের উপর গরু দেখতে দেখতে গদাইলস্করের মতো অফার দিল, "৪৫ এ দিবি?" মনটায় চাইছিল চারপায়ের গরুটার দড়ি খুলে নিয়ে দুইপায়েরটারে ধরে বেন্ধে বেচে দেই। ৫০% ডিস্কাউন্টে। ব্যাপারি পাত্তা না দিয়ে আরেক দিকে তাকায় রইলো। চাচা একটু ফাঁপড়ে পড়ে বলে, "৫০?"আমি মুখে কিছু বলতে পারতেছি না, মনে মনে ছাল ছাড়ানো শেষ। সরে গেলাম ওইখান থেকে। আব্বু বুঝছে ওই চাচার দৌড়। দূর থেকে দেখলাম ২মিনিট কি যেন চাপাগলায় বুঝাইল তারপর গরুটা কিনে দিল কত টাকায় যেন। আমি জানি না। ওই চাচা তার লোকজনসহ ওই গরু নিয়ে চলে গেল। এখন আমাদের আর আরেক চাচারটা কেনার পালা। কিন্তু আব্বুর ইতিমধ্যে পরিস্থিতি বুঝা শেষ। উনি বুঝছেন এখন এই হাটে আর এই বাজেটে হবে না, আরো বেশ কিছু টাকা নিয়ে এখনই বড় হাটে চলে যেতে হবে। আমি আফতাব আর কমলার সিচুয়েশন জানানোর পর আব্বু বলে দিল ফ্যামিলির হাইয়েস নিয়ে এখন গাবতলীতে যাব, না পেলে ওখান থেকেই মানিকগঞ্জ! সবাই বাসায় চলে আসলাম, অনলি টু গেট রেডি! এসে দেখি আমার ছোটবোন আর গরু পাগলা দুলাভাই আমাদের বাসায় চলে আসছে। ওদের বাড়িরও গরু কেনা হয়নি। দুলাভাইয়ের ছোটভাই কই কই ঘুরে বেড়াচ্ছে, গরু নাকি সেই-ই আনবে। দুলাভাই বিরক্ত হয়ে চলে আসছে আমাদের কি অবস্থা জানতে। উনি আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য রেডি। এদিকে আমার অবস্থা খারাপ। ননস্টপ হাটে ঘুরছি। পেটে দানাপানি নাই। গত রাত থেকে এই পর্যন্ত মাত্র এক দেড় ঘন্টার মতো ঘুম হয়েছে। মাথাব্যথায় চোখ টকটকে লাল। গায়ে কাদামাটি-গোবর। বীভৎস অবস্থা। মা আর বোন আমাকে যেতে দিতে চাচ্ছে না। আব্বু দ্বিধায়। উনি আমার অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়ে গেছেন আবার আমাকে ছাড়াও হাটে যেতে চাচ্ছেন না। আমার দুলাভাই বলছেন, উনি তো আছেন আমার না গেলেও চলবে। শেষমেশ আমি নিজে বুঝলাম, শরীরের এই টায়ার্ড অবস্থায় এই মুহূর্তে আমি একটা বার্ডেন মাত্র। এই ভাবে আমি গাবতলী বা মানিকগঞ্জ ঘুরে বেড়ানোর মতো ফিট না। তার থেকে আব্বু আর দুলাভাই আফতাব আর গাবতলীতে চক্কর দিয়ে আসুক, ততক্ষণে আমি গোসল করে, খেয়ে, মেডিসিন আর রেস্ট নিয়ে প্রিপেয়ার্ড হয়ে যাই। আল্টিমেটলি আমাদের মানিকগঞ্জেই যেতে হবে। সাথে যাবেন আমার অন্য যে চাচার গরু কেনা বাকি আছে উনি, উনার দুই ছেলে আর উনার ড্রাইভার। যেই কথা সেই কাজ। আব্বু, দুলাভাই, দুই কাজিন, চাচা, ড্রাইভার আর দাড়োয়ান আরেক ড্রাইভার আর হাইয়েস মাইক্রো নিয়ে যাচ্ছে - সাথে দেখি আমার বোনও আরেক পিচ্চি কাজিন বোনকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠছে। আমি অবাক। বললো হাটে তো এখন গরু নাই, কেউ গুতা দিতে পারবে না, তাই তারা এ সুযোগে গাড়িতে বসে বসেই হাটে দেখার এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে নিবে। অকাট্য যুক্তি।আমি কথা না বাড়ায় নিজেকে গুছায় নিতে গেলাম। মানিকগঞ্জ রওনা হবার আগে ওদের আবার বাসায় রেখে আমাকে তুলে নেয়া হবে।…