ফেসবুকে আমার প্রথম যে গরুর ছবি দেয়া ছিল, সেগুলা ছিল আমাদের ২০১০ এর কোরবানির। ওইটার ছবি দিয়েই আমার এই ভার্চুয়াল হাটের জগতে বিসমিল্লাহ। ওই গরুটা আমার অন্যতম ফেভারিট গরুও, কিন্তু গরুটা কেনার ঘটনা নিয়ে আমি কখনো বিশেষ উচ্চবাচ্য করি নাই। লজ্জা লাগতো। এর কারণ আছে।
আমার গরু কেনাও ছিল আমার লেখা গল্পের মতো। দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার! আমার বাপজানের ছিল আবার উল্টা কেস! আমি যেখানে ৭ দিন লাগায়ে দিতাম ২-১টা গরু কিনতে, সেখানে আব্বু প্রতি ৭ মিনিটে ২-১টা গরু কিনে ফেলতে পারতো। ২০১০-এও তার এই কারিশমা দেখা গেছিল।
ওই সময় আমরা গরু কিনতাম চাঁদরাতের আগেরদিন। আর এর আগেরদিন আব্বু আমার সাথে এলাকার হাটে যাইতো দরদাম বুঝে আসতে। যথারীতি ওই বছরও ঈদের দুই দিন আগে বাপ-ব্যাটা শাহজাহানপুর হাটে গেছি, সাথে দুই কাজিন ছোটভাই আর দাড়োয়ান চাচা ছিল। মেইন হাটে ঢুকার আগে মেইন হাটের উল্টা পাশের ছোট মাঠটায় দামটাম যাচাই করে দেখা শেষ। ঘুরে দেখতে আব্বু বেশ ভালো টাইম নিচ্ছিল। এমনিতে সে ২-৩টা গরু দেখে এক-দুই কথায় গরু কেনা টাইপ পাবলিক ছিল। এত সময় নিয়ে ঘুরপাক খাওয়ার মতো মানুষ না। কিন্তু ওইবার বুঝা যাচ্ছিল এইখানকার দামদর আব্বুর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। বলল, চল মেইন হাটে গিয়ে দেখি, এইখানে বেশী বেশী চায়।
আমার তাতে কোনও আপত্তি নাই কিন্তু সমস্যা হল গিয়ে তখন আমি ছিলাম চেইনস্মোকার। একটু পরপর দম নেয়া লাগত। তার উপর তখন আবার একজনের সাথেই দিনে কয়েকবার করে ফোনে কুশলাদি বিনিময়ের প্রয়োজন হইতো। সেও অনেকক্ষণ ধরে অস্থির হয়ে আমার ফোন ভাইব্রেট করাচ্ছে, সাথে সাথে আমিও ভাইব্রেট হচ্ছি। এই পরিস্থিতিরও একটা বিহিত হওয়া দরকার।
তো, আব্বু ওইপাশে যেতে চাইতেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ফেললাম। আব্বু আর কাজিনদের পিছন পিছন আসার ভান করে আব্বুরা একটু আগায় যাইতেই পিছনে ঘুরে আবার আগের জায়গায় এসে কানে ফোন আর মুখে বিষকাঠি নিয়ে নিলাম। হয়তো আজকে আব্বু বেশি সময় ঘুরবে ভেবে ইচ্ছা ছিল পরপর দুই কাঠি দম একবারে নিয়ে নিব। চোখ ছিল মেইন হাটে ঢুকা-বের হওয়ার পথের দিকেই। দ্রুত টেনে একটা শেষ করে ওইটার আগুনেই আরেকটা জ্বালাইসি মাত্র, এইসময় দেখি আমার দুই কাজিন আর দাড়োয়ান চাচা একটা তেজী টাইপের গরু নিয়ে মেইন হাট থেকে বের হয়ে ছুটতে ছুটতে বাসার দিকে যাইতেসে। প্রথমে ধন্দা খায়ে গেসিলাম! পরে আমিও পিছন পিছন দৌড়াইতে দৌড়াইতে চিল্লাইতেসি, “ওই কিরে এটা কার? কেম্নে? কেন? কত?” ছোটভাই পিছনে ঘুরে আমাকে দেইখাই বলে, “তুমি কই ছিলা মিয়াঁ? তোমার গরু! বিড়ি ফালাও! চাচ্চু পিছনে!”
এইটা কোনো কথা! লিটারেলি মাত্র ৫-৭ মিনিট হইসে বাপটারে একা একা দুই পা ঘুরাফিরা করতে দিসি, এরমধ্যেই ঘটনা ঘটায় ফেলসে! ইচ্ছা হইসিলো ওইখানেই ল্যাটা খায়ে বইসা কতক্ষণ বিলাপ কইরা কান্দি, কিন্তু বিড়ি হাতে পিছন ঘুরে একটু দূরেই বাপরে দেখে দুই পায়ে আচমকা স্পিড উঠে গেল! এক দৌড়ে গরু নিয়া বাড়িতে!
ওইবার হাটে গরু কেনার সময় থাকা অবস্থায়ও নিজের গরু নিজে কিনতে পারি নাই। কেনা দূরস্ত পছন্দও করতে পারি নাই। একটা বিড়ি খাইতে গিয়া সব মিস হয়ে গেছে!
এগুলা কাউরে কওয়া যায়!