আসসালামু আলাইকুম। সবার কোরবানির গরু কেনার গল্প দেখে আমিও লিখবো লিখবো করে লিখেই ফেললাম।
একদম শুরু থেকেই শুরু করছি।এই গ্রুপটির মতো ২০১৫ সালে আমিও একটা ক্যাটেল গ্রুপ খুলেছিলাম (Amra Goru Pagol Bhai-Brother – AGPB ) নামে । যেহেতু আমরা প্রত্যেকটি গ্রুপই এক একটা পরিবারের মত। সেহেতু আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিগত দুই বছর যাবত আমরা কোরবানি ঈদে আমাদের গ্রুপের সকলের সাধ্যমত একটা কোরবানির গরু এতিমখানায় দান করি। আজকের গল্পটা ২০১৯ সালের চাঁদ রাতের দিন সকালবেলার।যেহেতু গ্রুপের পক্ষ থেকে কেনা গরু সেহেতু গ্রুপের আরেক এডমিন Rafe Mamun আর আমি মিলেই গেলাম কোরবানির গরু কিনতে, পথিমধ্যে ৩ জন ছোট ভাই ও যুক্ত হয়েছিল আমাদের সাথে।টাকা যা উঠেছিলো সব নিয়েই রওনা হলাম ইস্টার্ন হাউসিং হাটে। ভাগ্যক্রমে গতবছর চান রাতের দিন দাম তুলনামূলক কম ছিল তাই আমাদের গরু কিনতে খুব একটা সময় লাগেনি। গিয়ে পছন্দ করা ও দামাদামি করা শুরু করলাম।সাদা একটা গরু পছন্দ হলো, বেপারীর সাথে বেশ খানিকক্ষণ কথাবার্তা বললাম কিন্তু ৪০ হাজারের নিচে সে দিবেই না। তারপর একটু চা নাস্তা খেয়ে খুব রিলাক্স মুডেই আবারো হাটে ঢুকলাম।যেহেতু গরুর দাম কম ছিল সেহেতু বুঝা হয়ে গিয়েছিল যে একটা না একটা হয়েই যাবে। নওগাঁর এক বেপারির ২০ টার মত ছোট সাইজের গরু নিয়ে এসেছিল। যার ৯ টাই ছিলো অবিক্রিত।তাই খুব রিকোয়েস্ট করে বলল যে বাবা আমার থেকে নিয়ে যাও ভালো একটা গরু দিবো। ভাগ্যক্রমে ২০১৮ সালে আমরা এতিমখানায় যে গরুটা দিয়েছিলাম দেখতে হুবহু আরেকটা গরু পেয়ে গেলাম উনার কাছে। তাই ভাবলাম এটাই নিবো।শুরু করলাম দামাদামি, আমি ৩১ হাজার পর্যন্ত বলে চলে গিয়েছিলাম, উনার শেষ ছিল ৩৫।তারপর খানিকটা দূরে গিয়ে আমি অন্য গরু দেখছিলাম এরই মধ্যে উনার ছেলেকে ডেকে পাঠালো আমার কাছে। কিছু বাড়িয়ে নিয়ে নিবো এই ভেবে উনার সাথে গেলাম, আমি যাওয়ার পর উনি আমাকে জরিয়ে ধরে বলল “বাবা এতিম খানার জন্য গরু টা নিবেন আমারটাই নেন, এই গরু গতকালকে ৪০,০০০ বলছে দেইনাই, এখন বাজার খারাপ বাবা আপনি গরু টা নিয়ে যান! “
আমি বললাম – চাচা আর ৫০০ টাকার বেশি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, আমি সামনে আরো দুই একটা গরু দেখছি ওখানে গরু আরো পছন্দ হয়েছে। দিলে দিয়ে দেন। ব্যাস রাজি হয়ে গেল ৩১,৫০০ টাকায়। ধরতে গেলে মোট ৪০ মিনিটের আগেই গরু কেনা শেষ। এরইমধ্যে ফোন দিল Shahriar Porosh ভাই, উনার ছোট ভাইয়ের জন্য আরেকটা গরু কিনতে আসছে।উনারা নাকি একটা গরু দেখছে সেটা দেখার জন্য ডাকলো আমাকে। গিয়ে দেখি আমরা যে সাইজের কিনেছি ৩১,৫০০ টাকায় ওটার সমান গরু নিয়ে ৪৫,০০০ টাকায় দাম দর করে বসে আছে। বললাম চলেন ভাই আমি যার কাছ থেকে গরু নিয়েছি উনার কাছে আরো গরু আছে। নিয়ে এসে বললাম চাচা আর একটা গরু দেন আমার এই ভাইকে। ব্যাস ছোটখাটো একটা গোলগাল গরু বের করে নিলাম।এটা নাকি ৪৫,০০০ টাকার নিচে দিবেনা। ততক্ষনে নেমে গেছে আবার বৃষ্টি, উনাদের ট্রিপল এর নিচে ততক্ষণে আমাদের সবার সাথে উনার ছেলেদের এবং উনার ভাইদের সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে গেছে। বৃষ্টির মধ্যে উনাদের সাথে আড্ডাটা কখনো ভুলবো না। তারপর আর কি চাচা কে ইমোশনালি বুঝিয়ে ৪০,০০০ টাকায় রাজি করে ফেললাম।চাচা ততক্ষনে আমাদের বন্ধুর মতো হয়ে গেছে। আমাদের গরুর টাকা বুঝে পেয়ে আমাদের শিখানো পন্থায় আমাকে দিয়েই গরুর পাছায় থাপ্পড় দিয়ে দিলো।ব্যাস আলহামদুলিল্লাহ দুই গরু নিয়ে আমরা চলে আসলাম।
হয়তো এতিমখানার গরুটা সাইজে অনেক ছোট ছিল। তবে আমাদের নিয়ত ও কিনতে পারার পর আমাদের খুশিটা ছিল আকাশছোঁয়া আর এতিমখানা ছাত্ররা যখন এই গরুটি পায় তাদের উল্লাস দেখে যে আনন্দ লেগেছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।গরুটি দুটি এতিমখানায় সমান দুভাগে ভাগ করে দিয়েছিলাম।
রিযিকের মালিক আল্লাহ আমরা একটি মাধ্যম মাত্র। আশা করি আপনারাও উৎসাহিত হয়ে আগামী ঈদে আপনাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এরকম উদ্যোগ নিবেন। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’আলার বলে গল্পটি শেষ করছি। গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।