আমার ২০১৮ এর গরু – Mir N. Hasan

১০০০% সত্যি কথা! মোস্ট অফ দ্য টাইম মানুষ যাদেরকে “পাগলা” গরু বলে আমি দেখসি তার ৭৫% গরুই আসলে ঘরে/খামারে বেঁধে পালা, শান্ত পরিবেশে ২-৩জন মানুষ আর ২-৪টা গরুর মাঝখানে থেকে বড় হওয়া গরু। এরা মোটেও পাগল না, এরা প্যানিকড! এরা হুট করে এই পাগলা শহরে এসে আমাদের মাঝে পরে আমাদের আতংকে অস্থির হয়ে নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য আমাদের থেকে সরতে চায়, নীরব কর্নারে/অন্ধকারে বা মাঠ টাঠের দিকে ভেগে যেতে চায়। এরা অপরিচিত মানুষের হাত থেকে পালানোর জন্য দৌড়ায়।

জাস্ট ইমাজিন, আপনাকে আমাকে ধাম করে শত শত গরুর খোলা এক পালের মাঝে ফেলে দিলে আর কয়েকটা গরুকে আমাদের দিকে আগায় আসতে দেখলে আমাদের ফার্স্ট রিয়েকশন কি হবে? অবশ্যই আমরা দৌড়ায় ওই পালের মাঝ থেকে সরে আমাদের হিসাবে নিরাপদ কোনো জায়গায় চলে এসে বাঁচার চেষ্টা করবো। বেচারা গরুগুলাও তো তাই করে! এটাই স্বাভাবিক। এটাকে পাগলামি বললে সুস্থতা কি!

আমার ২০১৮ এর গরুটা কেনার পর থেকে বাসায় আনার পর পর্যন্ত পাগলামির চূড়ান্ত করে ছাড়সে। আমাদের গরুর টেক কেয়ার সাধারণত আমাদের বাড়ির দারোয়ান চাচা করেন। উনি জামালপুরের মানুষ। গরু পেলে অভ্যস্ত। পালতে ভালোবাসেন। উনিও ভয় পেয়ে গেছেন। কোনোভাবেই শান্ত হইতেসিলো না ব্যাটা। চোখ লাল, চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছে আর সমানে ফোঁসফোঁস করতেসিলো। ৩টা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা থাকার পরও মনে হইতেসিলো যেকোনো সময় ছুটে যাবে। নাকে নাকা ছিল। তবু কেউ কাছে ভিড়তে পারতেসে না। এমনকি খাবার-পানিও দেয়া যাইতেসিলো না।

আমি চাচাকে গোসল করায়ে খাবার পানি দিতে বলি। চাচ্ছিলাম একটু সময় দিতে, পরিচিত হলে, রিল্যাক্সড হলে কিছুটা ঠান্ডা হবে। হইলো না। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রহমতে আমার একটা জিনিস চোখে লাগে।

আমি চাচাকে বলি আমি দড়ি টাইট করে ধরতেসি আপনি গরুর নাকা কেটে দেন। চাচা অবাক। কোনমতেই রাজি না। এম্নেই এই ত্যাদর গরু ধরা যায় না তার উপর নাকা কাটা মাত্রই সিচুয়েশন কন্ট্রোলের বাইরে যাবে গিয়ে। আমার কি…আমি তো রাতে বাসায় চলে আসবো, গরু সারারাত পালতে হবে একা চাচার, তখন সে কি করবে!
তারপর আমি যখন জোর দিয়ে বলসি হয় আমি গরু ধরি আপনি নাকা কাটেন নাইলে আমি কাটি আপনি ধরেন…পরে কি হবে ভেবে ভয় পায়েন না, নাকা এখন কাটবই। তখন সে বিশ্বাস রেখে নাকা কেটে দিসে।

নাকার কাছে হাত নেয়া মাত্রই আমি আর চাচা অবশ্য প্রায় উড়ে যাইতেসিলাম। কোনোমতে ধস্তাধস্তি করে কেটে দিয়ে নাক থেকে পুরা দড়ি বের করে নিয়ে আসছি। হাল্কা একটু ব্লাড বের হইসে। এরপর গরুটাকে পানি টানি খাওয়ানো হইসে।

আসলে ব্যাপারটা ছিল এরকম যে ঘরে পালা গরু ঢাকায় এসে মনে হয় ছটফট করসিলো, ব্যাপারি দিসে নাকার দড়ি কষে টাইট করে। এতই টাইট হইসে যে গরুটা কন্সট্যান্ট এগোনির মধ্যে ছিলো। অবলা প্রাণী কাউকে পেইনের কথা বলতে পারে না, ছটফট করসে আর এজন্য আরও মার খাচ্ছে। টান লাগে দেখে খাবার-পানি কিচ্ছু খেতে পারতেসে না। সেই দড়িটা কেটে বের করে দিতেই যেই কৃতজ্ঞতার চোখে আমাদের দিকে তাকায় ছিলো ওইটা ভাষায় ফুটায় তোলা যায় না। এরপর বুভুক্ষের মতো পানি খাইলো। আমি কলা খাওয়াইলাম। আদর করলাম। তবু ভয় পাচ্ছিলো। পাওয়াটাই স্বাভাবিক। নতুন জায়গা তো।

ওই রাতে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির হাত থেকে বাচাইতে আমরা আবার মাঝরাতে বৃষ্টিতে নেমে ওরে খুলে ভিতরে এনে বাঁধি। পরপর ২বার ওকে এভাবে সেইভ করায় ও আমাদের পুরাপুরি ট্রাস্ট করে একেবারে শান্ত হয়ে যায়।

কি লেভেলের আদুরে একটা গরু ছিলো এটা কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না। সামনে দাড়ালেই গা ঘেঁষে দাড়ায় যাইতো, এরমানে এখন তাকে হাতায় দিতে হবে। যতক্ষণ হাতাবেন সে নড়বেও না। আর আপনি যদি ওর সামনে বসে ওর গায়ে হাত দেন তো শুয়ে পরবে, মাথা আপনার কোলে তুলে দিবে। চার পা টানটান করে লেটকায় পড়ে থাকবে।
বাসার সব বাচ্চার প্রিয় গরু ছিলো ওটা। অবিকল আরেকটা বাচ্চা ছিলো যে।

এই সেইম গরুই যে প্রথম দিকে পুরা কারবালা করে ফেলসিলো তা কে বিশ্বাস করবে। ব্যাপারির ওই ছোট্ট একটা ভুল যদি আমরা ধরতে না পারতাম, এই আদুরে বাচ্চা গরুটা তার জীবনের শেষ কয়টা দিন তীব্র ব্যথা নিয়ে বিনা খাবারে ভুগে মরতো। পাগলামি করতো। জবাই দিয়ে আমরা বলতাম, যাক বাবা একটা পাগলা গেছে, বাঁচা গেছে। ওর পেইনটা বুঝতাম না।

ওদেরকে বুঝতে হবে। নিজেদের ওদের জায়গায় রেখে ওদের বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর তৈরী সকল মাখলুকাতের মধ্যে ওরাও একটা মাখলুকাত, আর আমরাও একটা মাখলুকাত মাত্র। আমরা ওদের তুলনায় নিজেদের শুধুমাত্র তখনই যোগ্যতর ভাবতে পারি, যখন আমরা ওদের তুলনায় নিজেদের ব্রেইন আর মানবিক গুণগুলি বেটার ভাবে চর্চা করতে পারবো। নাহলে আমরা ওদেরই সমান, হয়তো ওদের অধমও হয়ে থাকতে পারি। চারপাশে তাকায় দেখেন, কি মনে হয়… ১৮,০০০ মাখলুকাতের মাঝে সবসময়ে সত্যিই কি আমরাই শ্রেষ্ঠ মাখলুকাত?! 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *