।। পি ছু টা ন।। গুগলে সার্চ করলে দেখা যায় বাংলা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে অন্যতম মিষ্টি ভাষা। আর সেই মিষ্টি ভাষার একটা খুব মিষ্টি শব্দ হলো "পিছুটান" যার অর্থ হলো…
শেষ পর্যন্ত Sajbir Ahmed Saikat এবং Golam Destegir ভাইয়ের অনুপ্রেরনায় আর Salman Sanjid ভাই মনোনয়ন করাতে একটা ঘটনা লিখে ফেললাম। গত ৮ বছর ধরে গরুর গ্রুপের সাথে জড়িত এবং এবারই…
আজকের লেখাটা আমি Arif Rafsan ভাইকে ডেডিকেট করছি। এটা কোনো একদিনের ছোট গল্প না। এটা অনেকটা আমার স্মৃতিচারণা, সাথে আল্লাহর কাছে একটা প্রার্থনা। ও হ্যা, এর সাথে আমার বাবার ২০১৪ সালের গরুর ছবি দিয়ে দিচ্ছি। আমি একজন এমবিভার্ট মানুষ। তবে ছোটবেলায় পিচ্চি হলেও ছিলাম বেশ চাপা ধরনের মানুষ। খুব একটা এক্সপ্রেসিভ না, কোনো আবেগ-অনুভূতিই ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারতাম না। তাই ভীতুও কেউ ভাবতো না। তবে কোরবানির ঈদের সময় বাড়িভরা মানুষের সবার একসাথে মনে পড়ে যাইতো এই পিচ্চি একটা বিরাট ভীতুর ডিম। ভীতু মানে ভয়াবহ ভীতু। তখন আমি প্রকাশ্যে ২টা জিনিসকেই মাত্র ভয় পাইতাম, আমার টিচার আর কোরবানির গরু। যদিও ছোটবেলায় খুব ভালো ছাত্র ছিলাম দেখে টিচারদের ভয় পাওয়ার ওই ব্যাপারটা আমি, আমার মা আর বাসার টিচার ছাড়া কেউ টের পান নাই কিন্তু গরুকে ভয় পাওয়ার মাত্রাটা এতো বেশী ছিল যে গুষ্টিসুদ্ধা মানুষ এই ব্যাপারে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল ছিল। আমার চেয়েও আমার ছোট কাজিন ভাই সাহস বেশী রাখতো, আমাকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করতো। লাভ হয় নাই।কিন্তু আমি গরু যেই পরিমাণ ভয় পাইতাম, আকর্ষণ বোধ করতাম তার তিন গুণ বেশী। আমাকে যারা আগে থেকে জানেন, আমার বাড়িতে বাঁধা গরু দেখেছেন তারা সবাই জানেন আমার বাড়ির সামনে একটু খোলা আর পাকা আংগিনা বা উঠানের মতো আছে। এক পাশে আছে গ্যারেজ। কোরবানির গরু আমরা এই উঠানে বেঁধে রাখি। আগে গ্যারেজেও রাখা হতো, এখন হয় না, উঠানেই সবগুলা বাঁধা থাকে। বাড়ির সবাই যার যার বারান্দায় দাড়ায়ে নিজের গরু দেখতে পান। তবে বারান্দায় দাড়ায় দেখতে হলে সবচেয়ে ভালো করে দেখা যায় দোতলার বারান্দা থেকে।আজকে স্বীকার করতে লজ্জা নেই, ছোটবেলায় আমি গরু দেখতাম ওই দোতলার বারান্দায় দাড়ায় থেকে।ভয়ের চোটে নিচে নামতে পারতাম না। সব কাজিনরা নিচে নেমে গরু দেখতো, ক্রিকেট খেলতো আর আমি বারান্দায় ঠায় দাড়ায়ে বা মেঝেতে থম মেরে বসে থেকে গরু দেখতাম। দেখতাম আর দেখতাম। দেখতেই থাকতাম, নড়তাম না। কারো সাধ্য ছিল না আমাকে নেয়ার। খাবারও ওখানে খেতাম। বারান্দার দুই পাশে আমার দুই চাচার ফ্ল্যাট। চাচীরা টেনেও তাদের ফ্ল্যাটে নিতে পারতেন না, আমি ওখানেই বসে থাকতাম। ক্লাস টু, থ্রি পর্যন্ত আমার এভাবেই কাটে। ফোর, ফাইভে উঠে সাহসের গুল্লি খেয়ে নিচে গরু বাঁধা থাকা অবস্থায় নিচে নামা, খেলাধুলা শুরু করি। এটা তখন প্রেস্টিজ ইস্যু। স্কুলে তখন একা যাওয়া-আসা করি। ক্লাস ফোর থেকে স্কুল পালাই। ইতিমধ্যে বাসা ছেড়েও পালাইসি একবার। আর গরু থাকলে নিচে নামতে পারি না, এটা কেমন কথা! তখনও কিন্তু আমার হাটে গিয়ে গরু কেনার মতো সাহস বুকে হয় নাই। হাটে যাওয়া দূরে থাক, কোরবানির সময় রাস্তায় হাটতাম না পাছে যারা গরু হাটায় নিয়ে যাচ্ছে তাদের, মানে খোলা অবস্থায় থাকা কোন গরুর মুখোমুখি পরে যাই! এর মধ্যেও হাটে গেছিলাম একবার, ক্লাস টু-থ্রি তে, বাবা চাচা কাজিনদের সাথে। কমলাপুর হাট। কাজিনরা সাহস দিয়ে নিয়ে গেছিলো। সেই সাহস যেতে যেতে পথেই শেষ, হাটের গেট পর্যন্ত গিয়ে প্রায় গগনে চাঁদ দেখে ফেললুম! কেউ আর টেনেও ভিতরে নিতে পারে না। আব্বু প্রচুর কায়দা-কসরত করলো, ধমকধামক দিল। লাভ হইলো না। শেষে আমার জায়গা হলো হাসিল ঘরের টংগে। ওইখানে বসে থেকেও ভয়ে ছিপি খুলে যায় যায় অবস্থা। ওখানে আমাকে বসায় রেখে বাকিরা গরু কিনে আনেন। আব্বু বলে দিসিলো আর কোনোদিন আমাকে হাটে নিবে না। এর থেকে বেশিদিন পরের কথা না, হয়তো ২-১বছর পর, ক্লাস ফাইভ-সিক্সে, এই প্রচন্ড ভীতু পিচ্চিরও হাটে গিয়ে আব্বুর গরু কিনতে হইসিলো। তাও গ্রামের জমজমাট ঈদের হাটে গিয়ে।ওইসময় থেকেই দিন বদলে যায়। আমাদের বাবা-চাচারা তখন সবাই মিলে কোরবানি দিতেন। কখনো কখনো আয়-রোজগার বেশী থাকলে দুই-একজন একা একা আলাদাও দিতেন, আবার অনেকসময় ২-১জন হয়তো কোরবানি দিতেনই না। আব্বু সবসময় ভাইদের সাথে দিতে ভালোবাসতেন। হাতে টাকা বেশী থাকলেও উনি আলাদা একা দিতেন না। কম থাকলেও কোরবানি দেয়া বাদ দিতেন না, কোনভাবে ম্যানেজ করে নিতেন। আমি যখন ফাইভ বা সিক্সে পড়ি এরকম সময়ে কোরবানির শরীকদের মধ্যে একজন আব্বুর সাথে কোনো পার্সোনাল কারণ নিয়ে ঝগড়া করে বসেন। যার সাথে ঝগড়া হয় উনি খুব তেড়িয়া টাইপের মানুষ আর এদিকে আব্বু আবার একটু আলাভোলা টাইপের। আব্বু ওই ঝগড়া নিয়ে মাথা ঘামাননি। দশটা পাতিল এক জায়গায় থাকলে ঠোকাঠুকি হবেই, তাতে কি। ওইদিকে ওই শরীক বাকিদের কিভাবে কিভাবে যেন ভুংভাং বুঝায়ে কনভিন্স করে ফেলসেন যেন এবার সবাই আলাদা আলাদাভাবে কোরবানি দেয় অথবা এবার আব্বু একা কোরবানি দিবেন, তারসাথে যেন শরীকানা নিয়ে আলাপ না করা হয় এরকম কিছু একটা। এদিকে আমাদের পরিবার কিছুই জানতো না। আমাদের শরীকানা থেকে আমাদের অজান্তেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়। ওই বছর আব্বুর ফিনানশিয়াল অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না। বলতে গেলে টানাটানিই ছিল। কোরবানি ওয়াজিব ছিল, তবে হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। ঈদের যখন আর মাত্র ৫-৬ দিন বাকি, গরুর বাজেট ঠিক হবে, তখন আব্বুকে জানানো হলো আব্বুকে তো এবার শরীক হিসাবে রাখা হয় নাই। পার্টনার ঠিক হয়ে গেছে। ২জন আলাদা কোরবানি দিবেন। আর বাড়ির সবার শরীকানার গরুতে নাকি এবার বাইরের লোক নেয়া হয়েছে, আব্বুকে বাদ দিয়ে। এরকম কষ্ট আব্বু জীবনে পান নাই। চোখে পানি এসে গেছিলো ভদ্রলোকের। হাতে টাকাও নাই যে একা দিবেন। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আমারও কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিল। এক আব্বুকে এরকম অবস্থায় দেখে, দুই আমরা কোরবানি দিতে পারবো না, এই কথা জেনে। আম্মু সাহস দেন আব্বুকে। আব্বু যেভাবেই হোক একাই দিবেন ঠিক করেন। উনার কাছে ছিল ছয় হাজার টাকা আর আম্মুর অনেকদিনের জমানো ছিল হাজার তিনেক টাকা। এরমধ্যেই হাসিল, কসাইসহ সব খরচ সমাধা করতে হবে। তাতে আব্বুর আপত্তি নাই। উনি উনার ওয়াজিব আদায় করতে পারবেন জেনেই খুশি। কোরবানি দিতে পারবেন এই আনন্দে উনার মধ্যে নতুন উদ্যম এসে গেলো। প্ল্যান করলেন বাজেট কম দেখে মানিকগঞ্জ চলে যাবেন গরু আনতে, ঢাকার হাটের থেকে ভালো হবে। আর যেই দুইজন আলাদা দিচ্ছিলেন তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করলেন ঢাকা থেকে সকালে পিকআপ নিয়ে গিয়ে গরু কিনে ওইদিনই চলে আসবেন। পিকআপ ভাড়াও হয়ে গেল। আমি মানুষটা তখন ভীতু হলেও অন্তত এটুকু বুঝতে পারসিলাম, আমার বাপটা আজকে একা। যাদের সাথে আব্বু হাটে যায় তারাও তো আজকে আলাদা, আব্বু একা একাই অনেকদূরে যাবেন আমাদের গরু আনতে। যদিও সাথে অন্য চাচারা যাচ্ছেন তাদের গরু আনতে কিন্তু আব্বুর গরু আব্বুর একাই কিনতে হবে। আর একটা জিনিস আমার মনে হইলো। ছোট হোক, বড় হোক এবার আব্বুর একা একটা আলাদা গরু হবে। হয়তো এখন থেকে প্রতিবারই তাই হবে - আব্বু আম্মুর কথায় এরকমই মনে হচ্ছিল। দুইজনই অনেক কষ্ট পাইসিলেন। ঠিক করসিলেন এ-ব্যাপারে আর কখনো অন্য কোন মানুষের মুখাপেক্ষী থাকবেন না। আমাদের নিজেদের গরু নিজেদের কিনতে হবে, আব্বুর একারই কিনতে হবে। ঠিক করে ফেললাম যেভাবেই হোক, যত ভয়ই লাগুক আমি আব্বুর সাথে যাবো। আব্বু একা যাবে না। আব্বুকে বলতেই আব্বু খুবই খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেলেন। ভুলেই গেলেন আমি ভীতু দেখে আমাকে উনি আর কখনো নিবেন না বলে দিসিলেন।যাইহোক, যাওয়ার দিন পিকআপে উঠতে গিয়ে দেখি যারা শরীকানায় গরু দিবেন তারাও এখন আমাদের সাথে যেতে চাচ্ছেন। নেয়া হলো তাদেরকেও। এই প্রথম আমি গ্রামের হাটে যাই। শুধু গ্রামের হাটে কেন, এই প্রথম আমি কোন হাটের ভিতর যাই। এই প্রথম আমাদের বাপ-ব্যাটার একসাথে ঘুরে ঘুরে গরু কেনা হয়। এই প্রথম খোলা পিকাপে বসে যাওয়া আসা হয় আমার। কিসের ভয়, কিসের কি! যদিও গাড়ি ছিল তবু আমি যাওয়ার সময় পিকাপের পিছনে বসে গেছি, আসার সময় গরু পিছনে রেখে বাপ-ব্যাটা পিকাপের ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আসছি। গরুর দাম ছিল সাড়ে সাত হাজার টাকা। বাকি দেড় হাজার টাকায় পিকআপ ভাড়ার শেয়ার, কসাই খরচ, গরু পালার খরচ, বখশিশ ইত্যাদি সব খরচ মেটানো হয়। দাড়োয়ানের সাহায্য নিয়ে আমি নিজেই গরু পালি, খাবার দেই, সাথেই থাকতাম সারাক্ষণ। ওই বছর বাড়িতে ওই গরুটাই সবচেয়ে ভালো হয় আলহামদুলিল্লাহ। পরের বছর পার্টনার না পেয়ে আব্বুকে আবার শরীকানায় সামিল হবার জন্য অনুরোধ করা হয়। আব্বু আর রাজি হন নাই। যদিও উনি উনাদের মানা করে দেন, কিন্তু বাসায় এসে খুব মন খারাপ করে ছিলেন। মনে মনে তিনি একসাথেই কোরবানি দিতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু অপমান মেনে নিয়ে বারবার ইউজড হতে চাননি। আল্লাহর কি আজব খেল, যার কৌশলে আব্বু শরীকানা থেকে বাদ পরে যান সেই উনি গত এতগুলো বছরে ২-৩বারের বেশী কোরবানি দিতে পারেননি। যদিও উনিও গরুপাগল মানুষ। অন্যের গরু কিনে দেন, নিজে শরীক হতে পারেন না। তবে গত দুইবছর দিতে পেরেছেন আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই সবসময় পারুন, ভালোভাবে পারুন। উনি দিতে না পারাতে আব্বু-আম্মু উনাকে আলাদাভাবে একটা বড় অংশ পাঠিয়ে দিতেন। আজও দেয়া হয় আলহামদুলিল্লাহ। যাই হোক, সেই আমাদের বাপ-ব্যাটার পার্টনারশিপের শুরু। তখন থেকে আমরা বাপ-ব্যাটা একসাথে হাটে যেতাম আসতাম, গরু কিনতাম। মানিকগঞ্জ থেকে বেশ কয়েকবার কিনি, এরপর ঢাকা থেকেই কেনা হতো। টাকার কষ্ট আল্লাহ আর দেন নি। প্রতিবছর আগের বছর থেকে বেশি সাহায্য করেছেন। বার্গেইনিং এর দায়িত্ব ছিল আব্বুর, কেনার পর আনার-পালার দায়িত্ব ছিল আমার। কসাই দিয়ে গরু কাটানোর দায়িত্ব আব্বুর, সাথে যোগালির কাজ করার দায়িত্ব আমার। ১০১টা বাড়ির মাংস দিয়ে আসার দায়িত্ব ছিল আব্বুর, ২-১টা আমার। এভাবেই চলছিলো। একসময় আব্বুকে ছাড়াই হাটে ঘুরতে যেতে শিখে যাই। স্কুল পালায় হাটে কত ঘুরসি হিসাব নাই। সবচেয়ে বেশি যেতাম কমলাপুর। এছাড়া মেরুল-বাড্ডা, নয়াবাজার(১-২বার), গাবতলি তারপর শাহজাহানপুরেও যাওয়া শুরু হয়। স্কুলের বদলে একসময় কলেজ পালানো, তারপর ভার্সিটি থেকে বাংক মারা শুরু হয়। সবসময় টার্গেট একটাই থাকতো, আব্বুর জন্য বাজেটের ভিতর সেরা গরুটা কিনতে হবে। দেশী ষাঁড়, ছোটখাটো, দুই দাঁত (৪ দাঁতও চলে, তবে ২দাঁত হলে বেশি ভালো হয়)। এক কোরবানির ঈদের আগে আগে কি হইলো কে জানে, আমার হাতে একটা খাম ধরায় দিয়ে আমার পার্টনার গরু কোরবানির পুরো ভার আমার হাতে দিয়ে কয়েকদিনের জন্য আল্লাহর ঘরের মেহমান হতে (হজ্ব) চলে গেল। সেই যে গেল, এতগুলা বছর হয়ে গেল আর ফেরত আসলো না, আর আসবেও না। শুনসি আল্লাহর ঘরের মেহমান ছিলেন, আল্লাহ নিজের কাছেই রেখে দিসেন। আমি আর দেখতে পাব না। এখন থেকে উনার কোরবানির ব্যবস্থা আমার একারই করতে হবে। করে যাচ্ছি। এখন আমি নিজের ব্যবসা থেকে নিজেই পালায় যাই। পালায় গিয়ে এখনো হাটে আব্বুর জন্য আমার স্বল্প ক্ষমতার মধ্যে একটা দেশী ষাঁড় গরু খুঁজি, ছোটখাটো, দুই দাঁত। জানি না এই বছর পারব কিনা। ইয়া মালিক, আজ এতবছর ধরে আমরা বাপ-ব্যাটা হারি নাই, নিরাশ হই নাই, তোমার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হই নাই। এইবছরও আমাদের থেকে মুখ ফিরায় নিও না। এই গ্রুপটায় এতগুলা মানুষ, আমাদের-আমাদের বাবামায়ের-আমাদের পরিবারের যার কোনো নেক আমল তুমি কবুল করেছ, সেই নেক আমলের ওসিলায় তুমি এইবারও আমাদের সবার নসীবে কোরবানির তৌফিক দিও, আমাদের হায়াত দিও, সুস্বাস্থ্য দিও। পুরো পৃথিবীটাকে আবার সুস্থ করে দিও। আমি আব্বুর গরু কিনতে যেতে চাই। দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তো।
সবার আগে ধন্যবাদ দিতে চাই Arif Rafsan ভাইকে আমাকে গল্প লিখার জন্য নমিনেট করার জন্য। আজ আমি ছোট করে শেয়ার করবো আমার ২০০৭ গরু কেনার কাহিনি। ওই কুরবানির ঈদের কিছু দিন আগে আমাদের গ্রামের বাড়ীর কাজ শুরু করলো আব্বু। উনি প্রতি সপ্তাহে গ্রামের বাড়ী যেতো আসা যাওয়ার মাঝেই থাকতো। ঈদের ৮ দিন আগে আব্বু আবার গ্রামে গেলো মালামাল কিনে দিতে আর লেভারদের টাকা দেয়ার জন্য। আমি তো এই দিকে ঢাকায় আব্বু জন্য অপেক্ষা করছি কখন আব্বু ঢাকায় আসবে। আমি আব্বুকে নিয়ে হাটে যাবো। ঈদের বাকী আর মাএ ৪ দিন আব্বু আসতাছে না আমার তো আর তর সইছে না এক কথায় পাগল হয়ে গেছে একটু পর পর আব্বুকে ফোন দিয়ে জ্বালাইতাছি কখন??? রওনা দিবে। একটা সময় আমাকে আব্বু রাগ হয়ে দমক দিয়ে বল্লো এতো পাগল হইছিস কেন??? আমি তো একটা কাজে আসছি নাকি??? না আসবো না আমি ঢাকায়। এবার কুরবানির ও দিবো না এই কথা বলে ফোন কেটে দিলো। একথা বলার পর আমার মনের অবস্থা বুজেন কেমন হতে পারে???।নিজের রুমে চলে গেলাম আর দরজা বন্ধ করে দিলাম। মা এতো ডাকলো ভাত খাওয়া জন্য রুম থেকে আর বেরই হলাম না। পরে আম্মু আব্বুকে ফোন দিয়ে সব বল্লো আমার কথা। তখন আব্বু বল্লো ছেলেকে বলে দেও আমি একটু পর রওনা দিবো আসেই গরু কিনতে যাবো। এই কথা শোনার পর মনটা ভালো হয়ে গেলো ওয়েট করতে লাগলাম আব্বু জন্য আজ যতরাত হোক না কেন আজই হাটে যাবো। রাত আনুমানিক ১১ টা আমি ভাত খেইতাছিলাম।হঠাৎ বাসার নিছে পিকাপ এর শব্দ আর আব্বুর গলার ওয়াজ শুনতে পেলাম আমি খাবার রেখেই দৌড়ে বারান্দায় গেলাম গিয়ে দেখি গাড়ীতে একটা লাল কাল রঙের দেশাল আর গির এর ক্রস টাইপের বড় সাইজের একটা গরু কাচপুর থেকে ৩৮০০০ টাকায় কিনে নিয়ে আসছে। আব্বু দারোয়ান দিয়ে গরু নামাচ্ছে আমি দোতলা থেকেই বল্লাম আব্বু এটা কাদের গরু???? আব্বু বল্লো আমাদের গরু জলদি নিচে আসো। তখন গেলো মনটা খারাপ হয়ে আমাকে ছাড়াই গরু কোন কিনছে??? আমি আর নিচে নামলাম না। কিন্তু এদিকে মনের ভিতরও বেকুল হয়ে আছে নিচে গিয়ে গরুটা দেখে আসি যত যাই হোক গরু পাগল তো। আমি আবার ছোট বেলা থেকেই একটু ঘাড় তেরা আমি আর জেদ করে নিচে নামি নাই। গরুর সামনেও যাই নাই। আব্বু গরু বেধে সব কিছু গুছায়া ঘরে ডুকে আম্মুকে বল্লো তোমার পোলার আবার কি নাটক শুরু হইছে??? গরু কিনলেও দোষ কিনতে দেরী হলেও দোষ নাকি??? বেশি আদর করি তো তাই মাথায় উঠে গেছে এমন মাইর দিমু সব ভুত মাথায় থেকে নেমে যাবে।তখন আমার আম্মুও রাগ হয়ে আব্বুকে বল্লো তুমিও তো নাটক কম জানো না। তোমাকে কে কইছে গ্রাম থেকে আসার সময় একদম গরু কিনে আসতে??? পোলা বসে রইছে তোমার লগে হাটে যাবে পছন্দ কইরা গরু কিনবো আর তুমি কি করলা??? আসার সময় গরু কিনে নিয়ে আসলা।ঈদ তো পোলাপান এর জন্য নাকি??? এই বলে আম্মুও পাশে রুমে চলে গেলো। আমি আমার রুম থেকে বসে বসে আব্বু আম্মু জগড়া শুনতাছি আর আমার চোখ দিয়ে পানি পরতাছে এমন আবস্থাতে আমিও ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে আব্বু নাস্তা খাওয়ার সময় আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো ছেলের মাথা থেকে ভুত নামছে???১০টা বাজে ঘুম থেকেই তো উঠে নাই। অন্য এই সময় তো ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠে গরুর পাশেই বসে থাকে আরো কিনো গরু একা একা এই বলে আম্মুও নাস্তা না খেয়ে উঠে গেলো। আব্বু চিন্তা পরে গেলো গরু কিনে তো মহা বিপদে পরে গেলাম ।তখন আব্বু নাস্তা করে আমার রুমে এসে দেখে আমি বসে আছি। তখন আব্বু বল্লো কি বেপার তুমি এখনো বসে আছো???? ওই দিকে তোমার গরু তো না খেয়ে বসে আছে। যাও গরুকে কিছু খেতে দাও। তখন আমি বল্লাম না ওই টা আমার গরু না আমার গরু হলে আমি নিজে যেয়ে কিনতাম। আমার এই অবস্থা দেখে আব্বু বল্লো চলো রেডি হয়ে নিচে নামো আমি বল্লাম কেন??? তখন আব্বু বল্লো তোমার জন্য আর একটা গরু কিনতে যাবো গাবতলী চলো। আমি তো অবাক কি??? আব্বু আর একটা গরু কিনবে??? খুশিতে আমি শেষ। লগে লগে রেডি হয়ে নিচে নেমে গেলাম। নিচে গেটের সামনেই রাতে আনা আব্বুর সেই গরুটা বাধা। গরুটা দেখার সাথে সাথেই গরুটার প্রেমে পরে গেলাম এতে ভালো লাগছিলো কি বলবো???কিন্তু আমি আর আব্বুকে বল্লাম না যে গরুটা আমার খুব পছন্দ হইছে চলে গেলাম গাবতলী হাটে। হাটে ডুকেই আব্বু গরু দেখতে লাগলো। তখন আমি আব্বুকে বল্লাম আচ্ছা আব্বু আমরা তো গরু কিনছিই তাহলে এক কাজ করি একটা বড় ছাগল নিয়ে নেই কি বলো??? আব্বু একটু রাগ হয়েই আমার দিকে তাকাইলো বল্লো আচ্ছা তুই কি চাস??? আগে ওইটা ফাইলান কর। তখন আমি একটা খাসীর দিকে আঙুল দিয়ে বল্লাম আব্বু আমার ওই বড় খাসীটা পছন্দ হইছে আমি ওই খাসীটা কিনবো। তখন আব্বু সেই খাসীটা কিনে দিলো ৯ হাজার টাকা দিয়ে।তখন মনের সুখে খাসী নিয়ে বাসায় চলে আসলাম (তখন ৯ হাজার টাকার খাসী অনেক বড় সাইজের ছিলো ওই খাসী কিনার গল্প টা আর একদিন শেয়ার করবো) এই ছিলো আমার ২০০৭ গরুর গল্প । আশা করি ভালো লাগবে।
আসসালামু আলাইকুম। সবার কোরবানির গরু কেনার গল্প দেখে আমিও লিখবো লিখবো করে লিখেই ফেললাম। একদম শুরু থেকেই শুরু করছি।এই গ্রুপটির মতো ২০১৫ সালে আমিও একটা ক্যাটেল গ্রুপ খুলেছিলাম (Amra Goru Pagol Bhai-Brother - AGPB ) নামে । যেহেতু আমরা প্রত্যেকটি গ্রুপই এক একটা পরিবারের মত। সেহেতু আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিগত দুই বছর যাবত আমরা কোরবানি ঈদে আমাদের গ্রুপের সকলের সাধ্যমত একটা কোরবানির গরু এতিমখানায় দান করি। আজকের গল্পটা ২০১৯ সালের চাঁদ রাতের দিন সকালবেলার।যেহেতু গ্রুপের পক্ষ থেকে কেনা গরু সেহেতু গ্রুপের আরেক এডমিন Rafe Mamun আর আমি মিলেই গেলাম কোরবানির গরু কিনতে, পথিমধ্যে ৩ জন ছোট ভাই ও যুক্ত হয়েছিল আমাদের সাথে।টাকা যা উঠেছিলো সব নিয়েই রওনা হলাম ইস্টার্ন হাউসিং হাটে। ভাগ্যক্রমে গতবছর চান রাতের দিন দাম তুলনামূলক কম ছিল তাই আমাদের গরু কিনতে খুব একটা সময় লাগেনি। গিয়ে পছন্দ করা ও দামাদামি করা শুরু করলাম।সাদা একটা গরু পছন্দ হলো, বেপারীর সাথে বেশ খানিকক্ষণ কথাবার্তা বললাম কিন্তু ৪০ হাজারের নিচে সে দিবেই না। তারপর একটু চা নাস্তা খেয়ে খুব রিলাক্স মুডেই আবারো হাটে ঢুকলাম।যেহেতু গরুর দাম কম ছিল সেহেতু বুঝা হয়ে গিয়েছিল যে একটা না একটা হয়েই যাবে। নওগাঁর এক বেপারির ২০ টার মত ছোট সাইজের গরু নিয়ে এসেছিল। যার ৯ টাই ছিলো অবিক্রিত।তাই খুব রিকোয়েস্ট করে বলল যে বাবা আমার থেকে নিয়ে যাও ভালো একটা গরু দিবো। ভাগ্যক্রমে ২০১৮ সালে আমরা এতিমখানায় যে গরুটা দিয়েছিলাম দেখতে হুবহু আরেকটা গরু পেয়ে গেলাম উনার কাছে। তাই ভাবলাম এটাই নিবো।শুরু করলাম দামাদামি, আমি ৩১ হাজার পর্যন্ত বলে চলে গিয়েছিলাম, উনার শেষ ছিল ৩৫।তারপর খানিকটা দূরে গিয়ে আমি অন্য গরু দেখছিলাম এরই মধ্যে উনার ছেলেকে ডেকে পাঠালো আমার কাছে। কিছু বাড়িয়ে নিয়ে নিবো এই ভেবে উনার সাথে গেলাম, আমি যাওয়ার পর উনি আমাকে জরিয়ে ধরে বলল "বাবা এতিম খানার জন্য গরু টা নিবেন আমারটাই নেন, এই গরু গতকালকে ৪০,০০০ বলছে দেইনাই, এখন বাজার খারাপ বাবা আপনি গরু টা নিয়ে যান! "আমি বললাম - চাচা আর ৫০০ টাকার বেশি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, আমি সামনে আরো দুই একটা গরু দেখছি ওখানে গরু আরো পছন্দ হয়েছে। দিলে দিয়ে দেন। ব্যাস রাজি হয়ে গেল ৩১,৫০০ টাকায়। ধরতে গেলে মোট ৪০ মিনিটের আগেই গরু কেনা শেষ। এরইমধ্যে ফোন দিল Shahriar Porosh ভাই, উনার ছোট ভাইয়ের জন্য আরেকটা গরু কিনতে আসছে।উনারা নাকি একটা গরু দেখছে সেটা দেখার জন্য ডাকলো আমাকে। গিয়ে দেখি আমরা যে সাইজের কিনেছি ৩১,৫০০ টাকায় ওটার সমান গরু নিয়ে ৪৫,০০০ টাকায় দাম দর করে বসে আছে। বললাম চলেন ভাই আমি যার কাছ থেকে গরু নিয়েছি উনার কাছে আরো গরু আছে। নিয়ে এসে বললাম চাচা আর একটা গরু দেন আমার এই ভাইকে। ব্যাস ছোটখাটো একটা গোলগাল গরু বের করে নিলাম।এটা নাকি ৪৫,০০০ টাকার নিচে দিবেনা। ততক্ষনে নেমে গেছে আবার বৃষ্টি, উনাদের ট্রিপল এর নিচে ততক্ষণে আমাদের সবার সাথে উনার ছেলেদের এবং উনার ভাইদের সম্পর্ক খুব ভালো হয়ে গেছে। বৃষ্টির মধ্যে উনাদের সাথে আড্ডাটা কখনো ভুলবো না। তারপর আর কি চাচা কে ইমোশনালি বুঝিয়ে ৪০,০০০ টাকায় রাজি করে ফেললাম।চাচা ততক্ষনে আমাদের বন্ধুর মতো হয়ে গেছে। আমাদের গরুর টাকা বুঝে পেয়ে আমাদের শিখানো পন্থায় আমাকে দিয়েই গরুর পাছায় থাপ্পড় দিয়ে দিলো।ব্যাস আলহামদুলিল্লাহ দুই গরু নিয়ে আমরা চলে আসলাম।হয়তো এতিমখানার গরুটা সাইজে অনেক ছোট ছিল। তবে আমাদের নিয়ত ও কিনতে পারার পর আমাদের খুশিটা ছিল আকাশছোঁয়া আর এতিমখানা ছাত্ররা যখন এই গরুটি পায় তাদের উল্লাস দেখে যে আনন্দ লেগেছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।গরুটি দুটি এতিমখানায় সমান দুভাগে ভাগ করে দিয়েছিলাম।রিযিকের মালিক আল্লাহ আমরা একটি মাধ্যম মাত্র। আশা করি আপনারাও উৎসাহিত হয়ে আগামী ঈদে আপনাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এরকম উদ্যোগ নিবেন। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা'আলার বলে গল্পটি শেষ করছি। গল্পটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
Qurbani 2018 Mr.BullDozer সাধারণত গ্রপ এর সবচেয়ে নিরব মানুষ গুলোর ভিতর আমি একজন,লাইক দেওয়া ছাড়া আমার ওইরকম কোনো অ্যাকটিভিটি নাই,সবার গল্পও লিখা দেখা মন চাইলো আমিও একটা গল্পও লিখি, প্রত্যেক কুরবানী ঈদ এর দুই তিন দিন আগে থেকে হাট ঘুরা শুরু হয় আমার,আমার নানী বাড়ি পুরান ঢাকায়,সেই হিসেবে এক সময় সবচেয়ে বেশি পছন্দের হাট ছিল নোয়াবাজার হাট,বিশেষ করে রাতের বেলা বাবুবাজার ঘাট এর আনলোড টা সেই লাগতো,ট্রলার এ করে আনলোড টা বেশি এক্সাইটিং ছিল,বর্তমানে নয়াবাজার হাট আর আগের মত নাই,যাইহোক ২০১৮ সালে দুই দিন আগে বের হলাম, নয়াবাজর হয় এ ধোলাইখাল গেলাম সেখানেও হলো না,কয়েক টা ক্লোজ কল ছিল,আর বেপারী দের ভাব এর ঠেলায় টিকে থাকা যাচ্ছিল না, আমরা নিজেদের দের টা সহ মামাদের গরু মিলে ৫ টা কিনতে হয়,শেষমেশ একটা গাই গরু কিনলাম নওয়াবাজার থেকে,রইলো বাকি ৪ টা... আমি আমার কাজিন কে বললাম চলো বসিলা হাটে যাই,বিশাল হাট অনেক গরু,সে বললো পাগল হইসো,ঐখান থেকে গরু আনবো কিভাবে আমি বললাম লাইফ মে কুছ ডেয়ারিং কাড়তে হে (Joke) যদিও আমার গাবতলী থেকে পুরান ঢাকা গরু নিয়ে যাওয়ার বাজে অভিজ্ঞতা ছিল যাই হোক অনেক রাস্তার অনেক জাম ঠেলে বসিলা হাট এ ঢুকলাম,অল্প একটু বৃষ্টিতে হাট এর অবস্থা খুব খারাপ হয় এ গেলো,তার উপর নাই কারেন্ট,এমন একটা অবস্থা বেপারী যে যেমন পারতেছে দাম চাচ্ছে,গরুর সাইজ বুঝা যাচ্ছে না অন্ধকারে, কয়েকটা দেশাল দামাদামি করলাম, মিলায় তে পারতে ছিলাম আগে থেকে মাথায় ছিল এইবার লাল কিনবো না,গত দুইবছর লাল কিনেছি,এরপর ঘুরতে ঘুরতে হাট এর ভিতরে ঢুকে এই কালা মিয়া কে পাইলাম,দাম চাইলো ২ লাখ,আমি একবারে বললাম ১ লাখ ,বাকি দামাদামি করে শেষমেশ ১১৫ তে দিয়ে দিল,এরপর ভাইকে ফোন দিলাম,উনি আবার এক্সপার্ট অপিনিনিয়ন না দিলে কনফার্ম কেমনে করি,উনি আসলেন বললেন ঠিক আছে গল্পও টা এইখানেই শেষ হইতে পারতো, বাট এরপর কালা মিয়া তার খেলা দেখানো শুরু করলো,পিক আপে উঠানোর আগ পর্যন্ত পুরা হাট গরম করে ফেলল,এমন একটা অবস্থা কেউ আমরা পিকআপের পিছনে উঠার সাহস পাইতে ছিলাম না,পাশে আবার আমার ফ্রেন্ড এর একটা গরু ছিলো,ওইটাকে অলমোস্ট আধমরা বানায় ফেলসিল,যাইহোক এইসব দেখে আমার ভাই আমার উপর মহা বিরক্ত কেন এটা কিনলাম,আরো ভয়ংকর হইলো উনি গরু নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর জানাইলো গরু পিকআপ এর ছাদে উঠে লাথি দিয়ে পিকআপ এর গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে,এইভাবে অনেক কষ্টে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হইসে.বাসায় এসে শুনি ভাইজান ২ হাজার টাকা পিকআপ গ্লাসের জন্য জরিমানা দিসে😁😁 যদিও কোরবানির পর মাংস উনি বেশি খেয়েছিলো (Joke)
আমার বেবী সুলতানের কথা কম বেশি সবাই জানেন। ২০১৮ সালের অন্যতম সুন্দর গরুগুলোর মধ্যে একটি ছিলো। কিন্তু এর পেছনের গল্প অনেকেই জানেন না। Sajbir Ahmed Saikat ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে এই গল্প বলার জন্য সুযোগ দেয়ার জন্য। আমার লাইফে একটা ক্রাশ ছিলো যাকে দেখলেই জিটিভির রাম কাপুরের মত মনে হতো। ১৫/১৬ আগস্ট ২০১৮ এর সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ আমার ক্রাশ আমাকে ফোন করে বললো নুসরাত তুমি আমাকে কয়টা গরু কিনে দাও। আমি তো আর ঐ সময় দুনিয়াতেই ছিলাম না। ক্রাশের জন্য গরু 🙈🙈🙈. OMG. পারলে তো ব্রাহমা এনে দেই। বিশ্বাস করেন তার পরের দিন আর না হলেও ৫০০ লাল গরুর ছবি হোয়াটস্ অ্যাপে দিছি প্রাইস সহ। ক্রাশের তো পছন্দ হই না। ১৭ আগস্ট আমি আমার এলাকার হাটে ঘুরেছিলাম । হাট থেকে ফেসবুকে স্টাটাস দেয়ার সাথে সাথে ক্রাশ একটা ছবি দেখিয়ে বললো আমার এমন গরু লাগবে। লাগবে মানে লাগবেই। অনেক ফার্ম মালিকদের সাথেই কথা বললাম কিন্তু কারো সাথে মিলাতে পারছিলাম না। রং মিললে কুঁজ পাই না , কুঁজ পাইলে শিং পাই না ব্লা ব্লা। তখন সাদেক এগ্রোতে ফোন দিলাম। ইমরান ভাই্য়া বললো চলে আসেন। বাইক একটা নিয়ে দিলাম দৌড়। আর যাই হোক ক্রাশের গরু যেন অন্য কেউ কিনে দিতে না পারে এটাই ছিল মূল লক্ষ। গিয়ে ভাইয়াকে ক্রাশের গরুর রিকোয়ারমেন্ট বললাম কিন্তু ভাইয়া বললো একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি বললাম তাহলে ভাইয়া আমি একটু ঘুরি এখানে যদিও হবে না তাও আমার জন্য একটা গরু দেখতে থাকি কারন আমি জানি আমার বাজেট অনুযায়ী গরু এখানে পাওয়া যাবে না। ভাই্য়া একটা লাইন দেখিয়ে বললো এই সারির গরু গলা দেখেন যেটা পছন্দ হয় আমাকে বইলেন। বিশ্বাস করেন মনের মধ্যে অন্যরকম একটা ভয় আনন্দ এক্সাইটমেন্ট কাজ করতেছিলো। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। জীবনে কখনো নিজে একা গরু কিনি নাই। সব সময় আব্বু আর ভাই কিনেছে। আমার ভাই ও বলতেছিলো গরুর দাম নাকি বেশি যাবে কি যে করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার বন্ধু Wasim Akram বেশ কয়েকটা গরু দেখানোর পর বেবী সুলতানকে দেখালো। প্রথম দেখাতেই বললাম নানানা শিং নাই। ও বললো দেখ গরুটা কত সুন্দর । আমি বললাম শিং নাই। আর বিশ্বাস করেন এত বড় বড় গরুর মাঝে বেবী সুলতানকে একেবারেই পিচ্চি লাগছিলো।ওয়াসিম বললো গরুটা বের করে হাটাইয়া দেখ। আমি বললাম ঠিক আছে। সত্যি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না কি যে কিউট লাগছিলো ঐ সময় বলে বুঝাতে পারবো না। দিলাম ফোন ভাইকে। বললাম তাড়াতাড়ি আয়। ও চলে আসলো। মুখে কিছু বলতেছিলো না কিন্তু চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। আর হাত দিয়ে দেখালো 👌👌👌👌। কিন্তু বিপদ তো এখানে না বিপদ তো সামনে। যখন দেখলাম ওজন অনুযায়ী ওর মূল্য আসে ১,১৫,০০০ যেটা জীবনেও সম্ভব না। বন্ধুর জোড়াজুড়িতে ভাইয়রা কাছে গেলাম বললাম ভাই্য়া পছন্দ হয়েছে কিন্তু শিওর নিতে পারবো না। ভাইয়া বললো বাজেট কত? ৮০,০০০ ম্যাক্সিমাম বললাম। ভাইয়া বললো ৯০,০০০ আমি বললাম ভাইয়া সম্ভব না। মনটাও খারাপ হয়ে গেলো। বোধ হয় আর আমার গরু কেনা হবে না। একটু পর ভাই্য়া বললো ঠিক আছে নিয়ে যাও ।খুশি তো? বিশ্বাস করেন নিজের কান কে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এক্সাইটমেন্টের ঠেলায় ক্রাশের গরু কেনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। একটু পরে সাভার ব্রান্চ থেকে বড় বড় ৬ টা গরু আসলো। বিধিবাম ছবি তুলেই ক্রাশকে ছবি দেখানোর আগেই সেল হয়ে যাচ্ছে সবগুলো। শেষমেষ বড় একটা গরু ছিনতাই করে কোনরকম নিয়েছিলাম। ক্রাশের ৩ টা গরু কিনলাম। কিনতে কিনতে রাত ২:৩০ টা। ঐ দিকে আম্মু আব্বুর ভয় এত রাতে এখানে। আবার আনন্দ নিজের গরু একা কেনার। ফেসবুকে পোষ্ট করতে পারছিলাম না কারন যত যাই বলেন ক্রাশের গরুর চেয়ে আমার গরুএকটু বেশি সুন্দর ছিল।পরে যখন সবাই দেখলো আর প্রশংসা করলো আমি মনে হচ্ছিলো ৭ আসমানে উড়তেছিলাম
২০১৯ সালের কুরবানির গরু কেনার গল্প! আমি এই প্রথম এইভাবে গল্প লিখতে বসছি। আমার লেখা খুব একটা ভাল না, বানান ও গ্রামার ভুল হওয়ার চান্স অনেক, সবাই ক্ষমাস্বরূপ দৃষ্টিতে দেখার অনুরধ রইলো। বেশিরভাগ খেত্রেই মানুষ গরু পাগলামিটা তাদের বাবা থিকে পেয়ে থাকে, আমি পেয়েছি আমার বড় ভাই এবং মামা থিকে, মুলত বড় ভাই থিকেই। অনেক বছর ধরেই আমি আর ভাই গিয়েই পছন্দ মতন নিয়ে আসি কুরবানির গরু। তবে ২০১৩ তে ভাই বিদেশ চলে যাওয়ার পর থিকে কুরবানি ঈদ অনেকটাই পাংশা যায় আমার। তবে ভাই চেষ্টা করেন প্রত্যেক বছর আসার, কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠে নাহ। ২০১৭ র পরে গত বছর আসার নিয়ত করলো ভাই। আমরা শব সময় ঈদ এর দুই দিন আগে, মানে চাঁদ রাতের আগের দিন গরু কিনতে যাই। কিন্তু উনার ফ্লাইটটা আমাদের প্লানের দিলো ১২ টা বাজায়। ২৪+ঘনটা ডিলে। যাইহোক ভাই এসে নামলো যেইদিন সকালে আমাদের যাওয়ার কথা সেদিন ভোর ৩ টায়, তারুপর উনি নিয়ত করসেন রোজাও রাখবেন। আমি পরসি মহাছিন্তায়, কারন প্রায় ৩দিন ট্র্যাভেল করে, না ঘুমায়, রজা রেখে হাঁট এ যাবেন উনি। যাইহোক সকাল ৯টায় আমি, বড় ভাই ও ইশতিয়াক জামান সানি ভাই রউনা দিলাম আমাদের প্রিও গাবতলির উদ্দেশে। আর ওইদিক থিকে Takbir Ahmed Abir সাথে আমার আরো ২ বন্ধু জয়েন করবে। গরু কিনতে হবে টোটাল ৩ টা। বাজেট নিয়ে নামসিলাম আমার টার জন্য ১২৫-১৩০ আর ঠিক করসিলাম এইবার গরু কিনবই একটু ডিপ কালার, ডিপ লাল অর কালা। ২০১৩ এর পর থিকে কপালে শুধু হাল্কা কালার গরু জুটতেসে গত কয়েকবছর গাবতলির ঈদ এর ২দিন আগের সকালের পরিবেষের সাথে এইবার কোন মিল এ পেলাম নাহ। গরু আছে বাইরের দিকে প্রচুর বাট বেপারি দাদুরা আছে চরম পার্টে। ভাগ হয়ে দেখা শুরু করলাম। আমাদের বাজেটের যেইটাই হাত দেই আস্কিং ২০০-২২০, "১৫০ র উপরে উইঠা কথা বলেন"। এর মধ্যে ৭ নং হাসিল ঘরের গলিতে একটা গরু খুব চখে ধরলো, চাইলো ১৮৫, বেপারি ছিল কয়েকজন খুবি অমায়িক লোক। তাকবির অনেক কষ্টে নামায় নিয়া আসলো ১৬০ এ। গরু খুলায় দেখলাম, তাকবির আমার কানে বল্য ১৪০ হইলেও গরু নিবি এইটা তুই, আমি বললাম রাজি। কিন্তু লাভ হইল নাহ ১৫৫ লাস্ট উনাদের। এইভাবে হতাশা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে শুনি সানি ভাই কাজ শেরে ফেলসে, উনার গরু কিনে ফেলসে, আমাদের বাকি দুই বন্ধু নিয়ে। যাক এইবার তাইলে দল ভারি, গরু কিনা ফালাব হয়ত তারাতারি :p দুপুর ৩টা পর্যন্ত কোড়া রোদে সিদ্ধ হচ্ছি, আর বেপারী দাদূদের ১৫০র উপর ঊঠেণ ডায়লোগ টা গিলে খাচ্ছি। হাঁট ও তুলনামুলক খালি। বড় ভাই বল্য "ঠাণ্ডা পাণী নীয়ে আয়", তার অবস্থা তখন ফুল টাইট রোজা আছেন, দেখি মাথায় ঠাণ্ডা পানি দিচ্ছেন। বুঝানো শুরু করলাম বাসায় চলো ইফতার করে আসি। বাট উনি রাজী না, গরু নিয়াই বাসায় যাবেন, FRUSTRATION এ ১৪২ও বলে ফেলসেন এক দেশাল গরুর উনি। অনেক বুঝানর পরে রাজি হইলেন ইফতার এর পরে আসতে। জিবনে এই প্রথম আমরা গাবতলি থিকে গরু না নিয়ে ফিরসি। সন্ধ্যায় রউনা দিলাম দুই ভাই বসিলা হাঁট এর উদ্দেশে। ওইদিকে খবর পাইলাম হাজারীবাগ হাটে গরু ছারতেসে, এক বন্ধু কিনে ফেলসে ১২৪ দিয়ে। কনফিউসড না হয়ে গেলাম বসিলায়। এইবার দুই ভাই ঠিক করলাম, বাশ খাইলে বড় খাবো কেন? বুকে বিশাল পাথর রেখে বাজেট কমায় নিয়া আসলাম ১০৫-১১০ এ। সানি ভাই আর Istiak Hossain এর জন্য ১ নং হাসিল ঘড়ের সামনে ওয়েট করতে করতে দেখি গরুর ঢল জাইতেসে, এবং সবাই ৫-১০ এক্সট্রা দিয়ে কিন্তেসে, অ্যান্ড এইভাবে গরু সেল হইলে হাঁট খালি হইতে ১ ঘন্টা। যাইহোক বিসমিল্লাহ্ বইলে শুরু করলাম। রাস্তার উপরের কিছু গরুর আস্কিং শুনে মাথা গরম হওয়ার আগেই মাইন হাটে ঢুকলাম (বাম পাসের টা)। ওইখানে আবার দাদুদের পার্ট একটু কম দেখে শস্তির নিশ্বাস ফেললাম। তারপরও ৫-১০ এর জন্য গরু আটকায় যাচ্ছে, তখন বুঝলাম সবাই কেন ৫-১০ এক্সট্রা দিয়া কিন্তেসে। এক পিচ্ছি গরু ১০৫ বললাম বেপারি তাও দিল নাহ। এর মধ্যে এক গরু খুব খুব ভাল্লালো, বাজেট আবার বারালাম :P ১৪০ পার হইলাম, বেপারি ১৬০ এর নিছে নামে না, বুঝলাম ১৫০+ হইলেই ছাড়বে, বাজেট ফেইল, চলে আসলাম। গরু তো আর মিলে নাহ। তার মধ্যে সানি ভাই একটা টিলার উপরে দারায় আমাকে বলে, তাওহিদ হাঁট তো ফাকা, ডানে বামে তো খালি বাশ। প্যারা না খেয়ে একটু সামনে আগাতেই দেখি এক লাইন এ সব আমার বাজেটের লাল গরু দাঁড়ানো। তার মধ্যে আমার যেটাতে চোখ পরল ওইটার ইতিমধ্যে দামাদামি চলতেসে। চোরের মতন উকি দিয়ে শুনলাম ১২০ বলসে, বেপারি ১৪০+। পার্টি শরতেই আমার ভাই- "কাকা গরু কার?- আমার মামা। কথাকার গরু- মেহেরপুর। কত চাও?-খারান আমাদের বড় ভাই রে ডাকি।" বড় ভাই রে দেখে আসলেই ভয় পাইলাম, আমার চেয়েও বিশাল দেহের অধিকারি, একদম পিয়র ভিলেন লুক :P সচরাচর ভাবে আমার ভাই খেজুরি আলাপ শুরু করে দিলো, বেপারি দেখি চরম কমেডি, নাম তার "কালু মিয়া", আগে নাকি বিরোধী দলের চেয়ারমান ছিল, কঠিন বেপার সেপার। যাইহক দাম শুরু করলাম, ১৮০ চাইলো কালু মামা, আমরা বারি মারি ১১৫ থিকে। তারপর আস্তে আস্তে কালু মামা- ১৬০, আমি আর সানি ভাই ১২০। ভাই কানে এসে সানি ভাই কে এর মধ্যে বলে গেসে "১৩২ পজন্ত যাও"। আমার দিকে তাকাইল সানি ভাই, আমি আবার বললাম ভাই গরু আমি এইটাই নিমু, কালার, ষেপ, ছেহারা জাস্ট দা অওে আই লাভ। প্রায় ৪০মিন দাম কশাকশির পর কালু মামা-১৪০, আমরা-১২৬। ফাইনালি সে ১৩৪ আমরা ১২৮, বুঝে গেসি গরু হয়ে গেসে। বাট এইবার তো কালু মামা আর নামে না, সানি ভাই ১২৯ এ আটকাইসে। কালু মামা বললো টাকা দেন, ৫০ এর বান্ডেল টা বের করলাম, মামা একটা অধিকার নিয়ে ৩০ রাখল, "এইবার ১০০ দেন"। বেপারটা আমার আর বড় ভাইয়ের খুব ভাল্লাগসে। চীৎকার দিলা্ম আলহামদুলিল্লাহ্। সারা দিন যেরকম প্যারা খাইসি, কল্পনাও করি নাই আল্লাহ কপালে এইভাবে মন মতন মিলায় দিবেন। আলহামদুলিল্লাহ্। কালু মামার সাথে ছবি তুল্লাম, হাশিল করে ভাই কে রিকশায় পাঠায় আমি সানি ভাই আর আমাদের দুইজন ভাই রাত ১২টায় হাটা ধরলাম। সানি ভাই কে বললাম ভাই আমার গরুকে নাম দেন, ভাই গরুড় রং দেখে নাম দিলো "APPLE"! সবচাইতে খুশি লাগলো আমার আম্মাজানের গরু দেখার পর রিয়াকশান্টা দেখে। মন ভরে গেলো।
শুরুতেই ধন্যবাদ দিতে চাই ইরফান ভাইকে আমাকে নমিনেশন এবং চ্যালেন্জ করার জন্য। যদিও আমি ভাল গল্প বলতে এবং লিখতে পারি না তারপরো চেষ্টা করবো আজকে আপনাদের সাথে আমার ২০১৭ সাল এর গরু কিনার গল্পটা বলার জন্য। ২০১১ সালের পর থেকে আমরা বরাবরই ঈদের ৩ দিন আগে গরু কিনতাম ২০১৬ পর্যন্ত। গরু কিনার আগের দিন থেকে চিল্লা চ্চিল্লি শুরু করে দিতাম কখন গরু কিনতে যাবো আর গরু কিনার আগের রাতে তো ঘুমই আসে না আমার। এই জিনিস হয়ত সব গরু পাগলেরই হয়......... সকাল হতে না হতেই শুরু করে দিলাম আমার আম্মার সাথে কখন যাব হাট এ আর যেন উনি আমার বড় ভাইকে ডাকে তাড়াতাড়ি গরু কিনতে যাওয়ার জন্য। তো তারপর নাস্তা শেষ করে আমার বড় ভাই, সেজ ভাই আর আমি, আমরা ৩ জন মিলে গেলাম গাবতলি হাটে, আমরা সব সময় এই হাট থেকেই গরু কিনি যেহেতু এই হাটটা আমার বাসার কাছেই। শুরু করলাম গরু দেখা, বাজেট ছিল সেইবার ৮৫। ভালই গরু হাটে কিন্তু গরু মিলেই না।আস্কিং ছিল অনেক বেশি, দামে মিলে তো সাইজে মিলে না আবার সাইজে মিলে তো দামে মিলে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল তখন পর্যন্ত গরু মিলাতে পারি নাই যেগুলা পছন্দ হয় ১০ থেকে ২৫ এর গ্যাপ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল জীবনের প্রথম এতক্ষণ ঘুরলাম তাও গরু মিলাতেই পারলাম না। শেষে বাধ্য হয়ে বড় ভাই বললো চল বাসায় যাই আগামিকাল আসবো আবার।এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে!!!!! সবাই দেখলাম ক্লান্ত তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলাম বাসায় সেইদিনের মত। খালি হাতে হাট থেকে বাসায় যাওয়া যে কি কষ্টের তা আর বলে বুঝানো যাবে না। হজ্জ এর দিন সকাল হতে না হতেই বড় ভাইকে ডাকা ডাকি শুরু করলাম। নাস্তা খেয়েই দৌড় দিলাম হাটের উদ্দেশ্যে। হাটে ঢুকার পর বুঝতে পারলাম গতকালের চেয়ে আস্কিং কিছুটা কম এবং বেচা কিনাও বেশ ভাল। কয়েকটা গরু দামাদামি করার পরহঠাত একটা লাল রঙ এর গরু চোখে পরে। গরুর কাছে গিয়ে দেখলাম ভালই সুন্দর।বেপারি দাম চাইল ১২০ আমি শুরু করলাম ৭০ দিয়ে তারপর বেপারি বললো নিলে ১১০ দিয়ে নিতে এইভাবে বলতে বলতে আমার লাস্ট ৮৫ বেপারির ৯৫। এমন সময় বড় ভাইয়ের সাথে সাইডে গিয়ে আলাপ করছিলাম যে আর ২-৩ বাড়িয়ে এইটা নিয়ে নিব এমন সময় কয়েকটা সুযোগ সন্ধানী লোক হঠাত এসে ৮৮ দিয়ে গরুটা নিয়ে গেল।। মন চাইছিল......... থাক আর রোজার সময় গালি দিলাম না। এর পর শুরু হল তুমুল বৃষ্টি। তো আমি আর আমার বড় ভাই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গরু দেখে দামা দামি করতে থাকি আর বুজতে পারি যে আস্তে আস্তে আস্কিং অনেক কমতেসে আর অনেক গরু ঢুকতেসে হাটে। তার পর একটা গলি দিয়ে যাওয়ার সময় উনাকে দেখি। আগে বের করে হাঁটাতে বলি। দেখার পর আমার আর বড় ভাই দুইজনেরই পছন্দ হয়। দাম চাইতেই বলে মামা ১২ টা গরু নিয়া আসছি আর ৫টা আসে বেইচা বাড়ি যামু। নিয়া যান।বললাম তাইলে বেচার মত দাম চাও বলল ১০৫ দিয়েন যা কিনা গত দিনের চেয়ে ১০-১৫ কম আস্কিং ছিল। ৭০ দিয়ে আমরা শুরু করলাম তারপর বেপারি বলল নিলে ৯০ দিয়ে নিতে হবে নাইলে দিবে না। আমার বড় ভাই ধুম করে ৭৫ বলে দিল। বেপারি বলল গতদিন নাকি ৮৫ দাম উঠসে, তাই এর উপরে বলতে হবে তার পরও আমি ১-২ করে ৭৮ বললাম। বেপারি মামা হাসি দিয়া বলল পারবে না। আমরা তখন চলে যাচ্ছিলাম হটাত আমি দৌড় দিয়ে পিছে এসে বললাম মামা শুধু শুধু বৃষ্টিতে না ভিজে গরুটা দিয়ে দাও নিয়ে যাই আমি আর ১ দিব মানে ৭৯। বেপারি তার ভাইদের নিয়ে এসে সেই মন মাতানো থাপ্পড় দিল আর বলল টাকা দেন(যেই থাপ্পড় দেখলে মন জুড়িয়ে যায় গরু পাগলদের :D ) আর দড়ি খুলে দিল। আর এভাবেই আল্লাহ মিলিয়ে দিল আমার ২০১৭ এর ভালবাসাকে। তো এই ছিল আমার ২০১৭ এর ভালবাসার গল্প।