সুলতান – Nusrat Jahan Unni

আমার বেবী সুলতানের কথা কম বেশি সবাই জানেন। ২০১৮ সালের অন্যতম সুন্দর গরুগুলোর মধ্যে একটি ছিলো। কিন্তু এর পেছনের গল্প অনেকেই জানেন না। Sajbir Ahmed Saikat ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে এই গল্প বলার জন্য সুযোগ দেয়ার জন্য।

আমার লাইফে একটা ক্রাশ ছিলো যাকে দেখলেই জিটিভির রাম কাপুরের মত মনে হতো। ১৫/১৬ আগস্ট ২০১৮ এর সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ আমার ক্রাশ আমাকে ফোন করে বললো নুসরাত তুমি আমাকে কয়টা গরু কিনে দাও। আমি তো আর ঐ সময় দুনিয়াতেই ছিলাম না। ক্রাশের জন্য গরু 🙈🙈🙈. OMG. পারলে তো ব্রাহমা এনে দেই। বিশ্বাস করেন তার পরের দিন আর না হলেও ৫০০ লাল গরুর ছবি হোয়াটস্ অ্যাপে দিছি প্রাইস সহ। ক্রাশের তো পছন্দ হই না। ১৭ আগস্ট আমি আমার এলাকার হাটে ঘুরেছিলাম । হাট থেকে ফেসবুকে স্টাটাস দেয়ার সাথে সাথে ক্রাশ একটা ছবি দেখিয়ে বললো আমার এমন গরু লাগবে। লাগবে মানে লাগবেই। অনেক ফার্ম মালিকদের সাথেই কথা বললাম কিন্তু কারো সাথে মিলাতে পারছিলাম না। রং মিললে কুঁজ পাই না , কুঁজ পাইলে শিং পাই না ব্লা ব্লা। তখন সাদেক এগ্রোতে ফোন দিলাম। ইমরান ভাই্য়া বললো চলে আসেন। বাইক একটা নিয়ে দিলাম দৌড়। আর যাই হোক ক্রাশের গরু যেন অন্য কেউ কিনে দিতে না পারে এটাই ছিল মূল লক্ষ। গিয়ে ভাইয়াকে ক্রাশের গরুর রিকোয়ারমেন্ট বললাম কিন্তু ভাইয়া বললো একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি বললাম তাহলে ভাইয়া আমি একটু ঘুরি এখানে যদিও হবে না তাও আমার জন্য একটা গরু দেখতে থাকি কারন আমি জানি আমার বাজেট অনুযায়ী গরু এখানে পাওয়া যাবে না। ভাই্য়া একটা লাইন দেখিয়ে বললো এই সারির গরু গলা দেখেন যেটা পছন্দ হয় আমাকে বইলেন। বিশ্বাস করেন মনের মধ্যে অন্যরকম একটা ভয় আনন্দ এক্সাইটমেন্ট কাজ করতেছিলো। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

জীবনে কখনো নিজে একা গরু কিনি নাই। সব সময় আব্বু আর ভাই কিনেছে। আমার ভাই ও বলতেছিলো গরুর দাম নাকি বেশি যাবে কি যে করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার বন্ধু Wasim Akram বেশ কয়েকটা গরু দেখানোর পর বেবী সুলতানকে দেখালো। প্রথম দেখাতেই বললাম নানানা শিং নাই। ও বললো দেখ গরুটা কত সুন্দর । আমি বললাম শিং নাই। আর বিশ্বাস করেন এত বড় বড় গরুর মাঝে বেবী সুলতানকে একেবারেই পিচ্চি লাগছিলো।
ওয়াসিম বললো গরুটা বের করে হাটাইয়া দেখ। আমি বললাম ঠিক আছে। সত্যি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না কি যে কিউট লাগছিলো ঐ সময় বলে বুঝাতে পারবো না। দিলাম ফোন ভাইকে। বললাম তাড়াতাড়ি আয়। ও চলে আসলো। মুখে কিছু বলতেছিলো না কিন্তু চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। আর হাত দিয়ে দেখালো 👌👌👌👌। কিন্তু বিপদ তো এখানে না বিপদ তো সামনে। যখন দেখলাম ওজন অনুযায়ী ওর মূল্য আসে ১,১৫,০০০ যেটা জীবনেও সম্ভব না। বন্ধুর জোড়াজুড়িতে ভাইয়রা কাছে গেলাম বললাম ভাই্য়া পছন্দ হয়েছে কিন্তু শিওর নিতে পারবো না। ভাইয়া বললো বাজেট কত? ৮০,০০০ ম্যাক্সিমাম বললাম। ভাইয়া বললো ৯০,০০০ আমি বললাম ভাইয়া সম্ভব না। মনটাও খারাপ হয়ে গেলো। বোধ হয় আর আমার গরু কেনা হবে না। একটু পর ভাই্য়া বললো ঠিক আছে নিয়ে যাও ।খুশি তো? বিশ্বাস করেন নিজের কান কে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এক্সাইটমেন্টের ঠেলায় ক্রাশের গরু কেনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। একটু পরে সাভার ব্রান্চ থেকে বড় বড় ৬ টা গরু আসলো। বিধিবাম ছবি তুলেই ক্রাশকে ছবি দেখানোর আগেই সেল হয়ে যাচ্ছে সবগুলো। শেষমেষ বড় একটা গরু ছিনতাই করে কোনরকম নিয়েছিলাম। ক্রাশের ৩ টা গরু কিনলাম। কিনতে কিনতে রাত ২:৩০ টা। ঐ দিকে আম্মু আব্বুর ভয় এত রাতে এখানে। আবার আনন্দ নিজের গরু একা কেনার। ফেসবুকে পোষ্ট করতে পারছিলাম না কারন যত যাই বলেন ক্রাশের গরুর চেয়ে আমার গরুএকটু বেশি সুন্দর ছিল।পরে যখন সবাই দেখলো আর প্রশংসা করলো আমি মনে হচ্ছিলো ৭ আসমানে উড়তেছিলাম

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *