২০১৯ সালের কুরবানির গরু কেনার গল্প – Mustafa Tawheed

২০১৯ সালের কুরবানির গরু কেনার গল্প!

আমি এই প্রথম এইভাবে গল্প লিখতে বসছি। আমার লেখা খুব একটা ভাল না, বানান ও গ্রামার ভুল হওয়ার চান্স অনেক, সবাই ক্ষমাস্বরূপ দৃষ্টিতে দেখার অনুরধ রইলো।

বেশিরভাগ খেত্রেই মানুষ গরু পাগলামিটা তাদের বাবা থিকে পেয়ে থাকে, আমি পেয়েছি আমার বড় ভাই এবং মামা থিকে, মুলত বড় ভাই থিকেই। অনেক বছর ধরেই আমি আর ভাই গিয়েই পছন্দ মতন নিয়ে আসি কুরবানির গরু। তবে ২০১৩ তে ভাই বিদেশ চলে যাওয়ার পর থিকে কুরবানি ঈদ অনেকটাই পাংশা যায় আমার। তবে ভাই চেষ্টা করেন প্রত্যেক বছর আসার, কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠে নাহ। ২০১৭ র পরে গত বছর আসার নিয়ত করলো ভাই। আমরা শব সময় ঈদ এর দুই দিন আগে, মানে চাঁদ রাতের আগের দিন গরু কিনতে যাই। কিন্তু উনার ফ্লাইটটা আমাদের প্লানের দিলো ১২ টা বাজায়। ২৪+ঘনটা ডিলে। যাইহোক ভাই এসে নামলো যেইদিন সকালে আমাদের যাওয়ার কথা সেদিন ভোর ৩ টায়, তারুপর উনি নিয়ত করসেন রোজাও রাখবেন। আমি পরসি মহাছিন্তায়, কারন প্রায় ৩দিন ট্র্যাভেল করে, না ঘুমায়, রজা রেখে হাঁট এ যাবেন উনি।

যাইহোক সকাল ৯টায় আমি, বড় ভাই ও ইশতিয়াক জামান সানি ভাই রউনা দিলাম আমাদের প্রিও গাবতলির উদ্দেশে। আর ওইদিক থিকে Takbir Ahmed Abir সাথে আমার আরো ২ বন্ধু জয়েন করবে। গরু কিনতে হবে টোটাল ৩ টা। বাজেট নিয়ে নামসিলাম আমার টার জন্য ১২৫-১৩০ আর ঠিক করসিলাম এইবার গরু কিনবই একটু ডিপ কালার, ডিপ লাল অর কালা। ২০১৩ এর পর থিকে কপালে শুধু হাল্কা কালার গরু জুটতেসে 

গত কয়েকবছর গাবতলির ঈদ এর ২দিন আগের সকালের পরিবেষের সাথে এইবার কোন মিল এ পেলাম নাহ। গরু আছে বাইরের দিকে প্রচুর বাট বেপারি দাদুরা আছে চরম পার্টে। ভাগ হয়ে দেখা শুরু করলাম। আমাদের বাজেটের যেইটাই হাত দেই আস্কিং ২০০-২২০, “১৫০ র উপরে উইঠা কথা বলেন”। এর মধ্যে ৭ নং হাসিল ঘরের গলিতে একটা গরু খুব চখে ধরলো, চাইলো ১৮৫, বেপারি ছিল কয়েকজন খুবি অমায়িক লোক। তাকবির অনেক কষ্টে নামায় নিয়া আসলো ১৬০ এ। গরু খুলায় দেখলাম, তাকবির আমার কানে বল্য ১৪০ হইলেও গরু নিবি এইটা তুই, আমি বললাম রাজি। কিন্তু লাভ হইল নাহ ১৫৫ লাস্ট উনাদের। এইভাবে হতাশা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে শুনি সানি ভাই কাজ শেরে ফেলসে, উনার গরু কিনে ফেলসে, আমাদের বাকি দুই বন্ধু নিয়ে। যাক এইবার তাইলে দল ভারি, গরু কিনা ফালাব হয়ত তারাতারি :p দুপুর ৩টা পর্যন্ত কোড়া রোদে সিদ্ধ হচ্ছি, আর বেপারী দাদূদের ১৫০র উপর ঊঠেণ ডায়লোগ টা গিলে খাচ্ছি। হাঁট ও তুলনামুলক খালি। বড় ভাই বল্য “ঠাণ্ডা পাণী নীয়ে আয়”, তার অবস্থা তখন ফুল টাইট রোজা আছেন, দেখি মাথায় ঠাণ্ডা পানি দিচ্ছেন। বুঝানো শুরু করলাম বাসায় চলো ইফতার করে আসি। বাট উনি রাজী না, গরু নিয়াই বাসায় যাবেন, FRUSTRATION এ ১৪২ও বলে ফেলসেন এক দেশাল গরুর উনি। অনেক বুঝানর পরে রাজি হইলেন ইফতার এর পরে আসতে। জিবনে এই প্রথম আমরা গাবতলি থিকে গরু না নিয়ে ফিরসি।

সন্ধ্যায় রউনা দিলাম দুই ভাই বসিলা হাঁট এর উদ্দেশে। ওইদিকে খবর পাইলাম হাজারীবাগ হাটে গরু ছারতেসে, এক বন্ধু কিনে ফেলসে ১২৪ দিয়ে। কনফিউসড না হয়ে গেলাম বসিলায়। এইবার দুই ভাই ঠিক করলাম, বাশ খাইলে বড় খাবো কেন? বুকে বিশাল পাথর রেখে বাজেট কমায় নিয়া আসলাম ১০৫-১১০ এ। সানি ভাই আর Istiak Hossain এর জন্য ১ নং হাসিল ঘড়ের সামনে ওয়েট করতে করতে দেখি গরুর ঢল জাইতেসে, এবং সবাই ৫-১০ এক্সট্রা দিয়ে কিন্তেসে, অ্যান্ড এইভাবে গরু সেল হইলে হাঁট খালি হইতে ১ ঘন্টা। যাইহোক বিসমিল্লাহ্‌ বইলে শুরু করলাম। রাস্তার উপরের কিছু গরুর আস্কিং শুনে মাথা গরম হওয়ার আগেই মাইন হাটে ঢুকলাম (বাম পাসের টা)। ওইখানে আবার দাদুদের পার্ট একটু কম দেখে শস্তির নিশ্বাস ফেললাম। তারপরও ৫-১০ এর জন্য গরু আটকায় যাচ্ছে, তখন বুঝলাম সবাই কেন ৫-১০ এক্সট্রা দিয়া কিন্তেসে। এক পিচ্ছি গরু ১০৫ বললাম বেপারি তাও দিল নাহ। এর মধ্যে এক গরু খুব খুব ভাল্লালো, বাজেট আবার বারালাম 😛 ১৪০ পার হইলাম, বেপারি ১৬০ এর নিছে নামে না, বুঝলাম ১৫০+ হইলেই ছাড়বে, বাজেট ফেইল, চলে আসলাম। গরু তো আর মিলে নাহ।

তার মধ্যে সানি ভাই একটা টিলার উপরে দারায় আমাকে বলে, তাওহিদ হাঁট তো ফাকা, ডানে বামে তো খালি বাশ। প্যারা না খেয়ে একটু সামনে আগাতেই দেখি এক লাইন এ সব আমার বাজেটের লাল গরু দাঁড়ানো। তার মধ্যে আমার যেটাতে চোখ পরল ওইটার ইতিমধ্যে দামাদামি চলতেসে। চোরের মতন উকি দিয়ে শুনলাম ১২০ বলসে, বেপারি ১৪০+। পার্টি শরতেই আমার ভাই- “কাকা গরু কার?- আমার মামা। কথাকার গরু- মেহেরপুর। কত চাও?-খারান আমাদের বড় ভাই রে ডাকি।” বড় ভাই রে দেখে আসলেই ভয় পাইলাম, আমার চেয়েও বিশাল দেহের অধিকারি, একদম পিয়র ভিলেন লুক 😛 সচরাচর ভাবে আমার ভাই খেজুরি আলাপ শুরু করে দিলো, বেপারি দেখি চরম কমেডি, নাম তার “কালু মিয়া”, আগে নাকি বিরোধী দলের চেয়ারমান ছিল, কঠিন বেপার সেপার। যাইহক দাম শুরু করলাম, ১৮০ চাইলো কালু মামা, আমরা বারি মারি ১১৫ থিকে। তারপর আস্তে আস্তে কালু মামা- ১৬০, আমি আর সানি ভাই ১২০। ভাই কানে এসে সানি ভাই কে এর মধ্যে বলে গেসে “১৩২ পজন্ত যাও”। আমার দিকে তাকাইল সানি ভাই, আমি আবার বললাম ভাই গরু আমি এইটাই নিমু, কালার, ষেপ, ছেহারা জাস্ট দা অওে আই লাভ। প্রায় ৪০মিন দাম কশাকশির পর কালু মামা-১৪০, আমরা-১২৬। ফাইনালি সে ১৩৪ আমরা ১২৮, বুঝে গেসি গরু হয়ে গেসে। বাট এইবার তো কালু মামা আর নামে না, সানি ভাই ১২৯ এ আটকাইসে। কালু মামা বললো টাকা দেন, ৫০ এর বান্ডেল টা বের করলাম, মামা একটা অধিকার নিয়ে ৩০ রাখল, “এইবার ১০০ দেন”। বেপারটা আমার আর বড় ভাইয়ের খুব ভাল্লাগসে। চীৎকার দিলা্ম আলহামদুলিল্লাহ্‌।

সারা দিন যেরকম প্যারা খাইসি, কল্পনাও করি নাই আল্লাহ কপালে এইভাবে মন মতন মিলায় দিবেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

কালু মামার সাথে ছবি তুল্লাম, হাশিল করে ভাই কে রিকশায় পাঠায় আমি সানি ভাই আর আমাদের দুইজন ভাই রাত ১২টায় হাটা ধরলাম। সানি ভাই কে বললাম ভাই আমার গরুকে নাম দেন, ভাই গরুড় রং দেখে নাম দিলো “APPLE”! সবচাইতে খুশি লাগলো আমার আম্মাজানের গরু দেখার পর রিয়াকশান্টা দেখে। মন ভরে গেলো।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *