২০০৭ সালের গরু কেনার গল্প – Ismayan Sumon Azan

সবার আগে ধন্যবাদ দিতে চাই Arif Rafsan ভাইকে আমাকে গল্প লিখার জন্য নমিনেট করার জন্য।

আজ আমি ছোট করে শেয়ার করবো আমার ২০০৭ গরু কেনার কাহিনি। ওই কুরবানির ঈদের কিছু দিন আগে আমাদের গ্রামের বাড়ীর কাজ শুরু করলো আব্বু। উনি প্রতি সপ্তাহে গ্রামের বাড়ী যেতো আসা যাওয়ার মাঝেই থাকতো। ঈদের ৮ দিন আগে আব্বু আবার গ্রামে গেলো মালামাল কিনে দিতে আর লেভারদের টাকা দেয়ার জন্য। আমি তো এই দিকে ঢাকায় আব্বু জন্য অপেক্ষা করছি কখন আব্বু ঢাকায় আসবে। আমি আব্বুকে নিয়ে হাটে যাবো। ঈদের বাকী আর মাএ ৪ দিন আব্বু আসতাছে না আমার তো আর তর সইছে না এক কথায় পাগল হয়ে গেছে একটু পর পর আব্বুকে ফোন দিয়ে জ্বালাইতাছি কখন??? রওনা দিবে। একটা সময় আমাকে আব্বু রাগ হয়ে দমক দিয়ে বল্লো এতো পাগল হইছিস কেন??? আমি তো একটা কাজে আসছি নাকি??? না আসবো না আমি ঢাকায়। এবার কুরবানির ও দিবো না এই কথা বলে ফোন কেটে দিলো। একথা বলার পর আমার মনের অবস্থা বুজেন কেমন হতে পারে???।নিজের রুমে চলে গেলাম আর দরজা বন্ধ করে দিলাম। মা এতো ডাকলো ভাত খাওয়া জন্য রুম থেকে আর বেরই হলাম না। পরে আম্মু আব্বুকে ফোন দিয়ে সব বল্লো আমার কথা। তখন আব্বু বল্লো ছেলেকে বলে দেও আমি একটু পর রওনা দিবো আসেই গরু কিনতে যাবো। এই কথা শোনার পর মনটা ভালো হয়ে গেলো ওয়েট করতে লাগলাম আব্বু জন্য আজ যতরাত হোক না কেন আজই হাটে যাবো। রাত আনুমানিক ১১ টা আমি ভাত খেইতাছিলাম।হঠাৎ বাসার নিছে পিকাপ এর শব্দ আর আব্বুর গলার ওয়াজ শুনতে পেলাম আমি খাবার রেখেই দৌড়ে বারান্দায় গেলাম গিয়ে দেখি গাড়ীতে একটা লাল কাল রঙের দেশাল আর গির এর ক্রস টাইপের বড় সাইজের একটা গরু কাচপুর থেকে ৩৮০০০ টাকায় কিনে নিয়ে আসছে। আব্বু দারোয়ান দিয়ে গরু নামাচ্ছে আমি দোতলা থেকেই বল্লাম আব্বু এটা কাদের গরু???? আব্বু বল্লো আমাদের গরু জলদি নিচে আসো। তখন গেলো মনটা খারাপ হয়ে আমাকে ছাড়াই গরু কোন কিনছে??? আমি আর নিচে নামলাম না। কিন্তু এদিকে মনের ভিতরও বেকুল হয়ে আছে নিচে গিয়ে গরুটা দেখে আসি যত যাই হোক গরু পাগল তো। আমি আবার ছোট বেলা থেকেই একটু ঘাড় তেরা আমি আর জেদ করে নিচে নামি নাই। গরুর সামনেও যাই নাই। আব্বু গরু বেধে সব কিছু গুছায়া ঘরে ডুকে আম্মুকে বল্লো তোমার পোলার আবার কি নাটক শুরু হইছে??? গরু কিনলেও দোষ কিনতে দেরী হলেও দোষ নাকি??? বেশি আদর করি তো তাই মাথায় উঠে গেছে এমন মাইর দিমু সব ভুত মাথায় থেকে নেমে যাবে।তখন আমার আম্মুও রাগ হয়ে আব্বুকে বল্লো তুমিও তো নাটক কম জানো না। তোমাকে কে কইছে গ্রাম থেকে আসার সময় একদম গরু কিনে আসতে??? পোলা বসে রইছে তোমার লগে হাটে যাবে পছন্দ কইরা গরু কিনবো আর তুমি কি করলা??? আসার সময় গরু কিনে নিয়ে আসলা।ঈদ তো পোলাপান এর জন্য নাকি??? এই বলে আম্মুও পাশে রুমে চলে গেলো। আমি আমার রুম থেকে বসে বসে আব্বু আম্মু জগড়া শুনতাছি আর আমার চোখ দিয়ে পানি পরতাছে এমন আবস্থাতে আমিও ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে আব্বু নাস্তা খাওয়ার সময় আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো ছেলের মাথা থেকে ভুত নামছে???১০টা বাজে ঘুম থেকেই তো উঠে নাই। অন্য এই সময় তো ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠে গরুর পাশেই বসে থাকে আরো কিনো গরু একা একা এই বলে আম্মুও নাস্তা না খেয়ে উঠে গেলো। আব্বু চিন্তা পরে গেলো গরু কিনে তো মহা বিপদে পরে গেলাম ।তখন আব্বু নাস্তা করে আমার রুমে এসে দেখে আমি বসে আছি। তখন আব্বু বল্লো কি বেপার তুমি এখনো বসে আছো???? ওই দিকে তোমার গরু তো না খেয়ে বসে আছে। যাও গরুকে কিছু খেতে দাও। তখন আমি বল্লাম না ওই টা আমার গরু না আমার গরু হলে আমি নিজে যেয়ে কিনতাম। আমার এই অবস্থা দেখে আব্বু বল্লো চলো রেডি হয়ে নিচে নামো আমি বল্লাম কেন??? তখন আব্বু বল্লো তোমার জন্য আর একটা গরু কিনতে যাবো গাবতলী চলো। আমি তো অবাক কি??? আব্বু আর একটা গরু কিনবে??? খুশিতে আমি শেষ। লগে লগে রেডি হয়ে নিচে নেমে গেলাম। নিচে গেটের সামনেই রাতে আনা আব্বুর সেই গরুটা বাধা। গরুটা দেখার সাথে সাথেই গরুটার প্রেমে পরে গেলাম এতে ভালো লাগছিলো কি বলবো???কিন্তু আমি আর আব্বুকে বল্লাম না যে গরুটা আমার খুব পছন্দ হইছে চলে গেলাম গাবতলী হাটে। হাটে ডুকেই আব্বু গরু দেখতে লাগলো। তখন আমি আব্বুকে বল্লাম আচ্ছা আব্বু আমরা তো গরু কিনছিই তাহলে এক কাজ করি একটা বড় ছাগল নিয়ে নেই কি বলো??? আব্বু একটু রাগ হয়েই আমার দিকে তাকাইলো বল্লো আচ্ছা তুই কি চাস??? আগে ওইটা ফাইলান কর। তখন আমি একটা খাসীর দিকে আঙুল দিয়ে বল্লাম আব্বু আমার ওই বড় খাসীটা পছন্দ হইছে আমি ওই খাসীটা কিনবো। তখন আব্বু সেই খাসীটা কিনে দিলো ৯ হাজার টাকা দিয়ে।তখন মনের সুখে খাসী নিয়ে বাসায় চলে আসলাম (তখন ৯ হাজার টাকার খাসী অনেক বড় সাইজের ছিলো ওই খাসী কিনার গল্প টা আর একদিন শেয়ার করবো) এই ছিলো আমার ২০০৭ গরুর গল্প । আশা করি ভালো লাগবে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *